০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলে পৌঁছেনি বই অথচ কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে

অনলাইন ডেস্ক

বছরের এক মাস পার হলেও অর্ধেক বইও পৌঁছেনি মাঠপর্যায়ে। অথচ বিনামূল্যের যে পাঠ্যবই স্কুলে শিক্ষার্থীরা পাননি, সেই বইয়ের আসল ও নকল কপি কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এনসিটিবি বলছে, রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।

স্কুলগুলোতে যখন বিনামূল্যের বইয়ের ব্যাপক সংকট, তখন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার কালোবাজারে গোপনে দেদারসে চলছে বই বেচাবিক্রি। ছদ্মবেশে বই কিনতে প্রথমে রাজধানীর নীলক্ষেতে যায়। খবর পাওয়া যায়, এখানে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব শ্রেণিরই পাঠ্যবই বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। আছে আসল নকল সব বইই। যা বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।

দোকানে নকল বই সরবরাহ করতে আসা এক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। কৌশলে তার সাথে দলটি ঢুকে যায় নীলক্ষেতের জিলানী বাজারে। যেখানে তৈরি হয় নকল পাঠ্যবই। আসল বইয়ের পিডিএফ প্রিন্ট করে বই আকারে তৈরি করে তা বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছে কালোবাজারিরা। তারা জানায়, তাদের পিছনে আছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাই অনায়াসেই তারা অপরাধমূলক কাজ করছেন বলেও অকপটে স্বীকারও করছেন।

নকল বই তৈরিকারকদের একজন বলেন, ‘ঝামেলায় পড়লে ফিরানোর লোক আছে। আমার মামা হচ্ছে ওয়ার্ড বিএনপি’র যুবদলের সভাপতি। আর আমার ভাই ইউনিটের সভাপতি। কোনো সমস্যা নেই।’

এরপর ফুটপাতের দিকে নজর দেয়া যাক। যেখানে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের আসল পাঠ্যবই। এই দোকানদার প্রথমে চলতি শিক্ষাবর্ষের বই থাকার কথা অস্বীকার করলেও পরে নবম-দশমের আসল বই বের করে দেন। ভেতরে পাতা উল্টালে দেখা যায়, বইগুলো এনসিটিবির তালিকাভুক্ত আর্মি প্রিন্টিং প্রেস, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং এবং অনন্যা প্রিন্টার্সের বই।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং এ বছর এক কোটি নয় লাখ বইয়ের টেন্ডার পেলেও এখন পর্যন্ত ডেলিভারি দিয়েছে মাত্র সাড়ে ১৬ লাখ। বাজার থেকে সংগ্রহ করা বইটি দেখে তাদের বলে স্বীকারও করে প্রতিষ্ঠানটি।

সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিংয়ের দুলাল সরকার বলেন, ‘এটা আমাদেরই বানানো বই। আসলে সরকার আমাদের যে অর্ডার দিয়েছে। আমরা রুট লেভেলে থানায় পৌঁছাই। এই পৌঁছায় দেয়ার পরে যদি বই লাইব্রেরিতে থাকে, তাইলে সরকারের উপর লেভেল থেকে যদি তদন্ত করা যায় তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বইটা কীভাবে লাইব্রেরিতে আসলো।’

এসব অনিয়মের দায় কি এড়াতে পারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড?

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলছেন, অনেক স্কুল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাহিদা দিয়ে তা বাজারে বিক্রি করে দেয়। যা উচিত নয় দাবি করে তিনি জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ অপরাধ করেও পার পাবে না।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কেউ যদি রাজনৈতিক পরিচয় যুক্ত করে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বাজারে, কালোবাজারে বিক্রি করে এটা অত্যন্ত কঠোর দণ্ডনীয় অপরাধযোগ্য একটি কাজ। কোনোভাবেই এটা মেনে নেয়ার মতো না। এবং তাকে শাস্তি দেয়া উচিত।’

এবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪০ কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের লক্ষ্য সরকারের। সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ বই প্রিন্ট হয়েছে আর ছাড়পত্র হয়েছে ৪৬ শতাংশ বইয়ের।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৯৩ জন দেখেছেন

স্কুলে পৌঁছেনি বই অথচ কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে দেদারসে

আপডেট : ০১:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বছরের এক মাস পার হলেও অর্ধেক বইও পৌঁছেনি মাঠপর্যায়ে। অথচ বিনামূল্যের যে পাঠ্যবই স্কুলে শিক্ষার্থীরা পাননি, সেই বইয়ের আসল ও নকল কপি কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এনসিটিবি বলছে, রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।

স্কুলগুলোতে যখন বিনামূল্যের বইয়ের ব্যাপক সংকট, তখন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার কালোবাজারে গোপনে দেদারসে চলছে বই বেচাবিক্রি। ছদ্মবেশে বই কিনতে প্রথমে রাজধানীর নীলক্ষেতে যায়। খবর পাওয়া যায়, এখানে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব শ্রেণিরই পাঠ্যবই বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। আছে আসল নকল সব বইই। যা বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।

দোকানে নকল বই সরবরাহ করতে আসা এক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। কৌশলে তার সাথে দলটি ঢুকে যায় নীলক্ষেতের জিলানী বাজারে। যেখানে তৈরি হয় নকল পাঠ্যবই। আসল বইয়ের পিডিএফ প্রিন্ট করে বই আকারে তৈরি করে তা বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছে কালোবাজারিরা। তারা জানায়, তাদের পিছনে আছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাই অনায়াসেই তারা অপরাধমূলক কাজ করছেন বলেও অকপটে স্বীকারও করছেন।

নকল বই তৈরিকারকদের একজন বলেন, ‘ঝামেলায় পড়লে ফিরানোর লোক আছে। আমার মামা হচ্ছে ওয়ার্ড বিএনপি’র যুবদলের সভাপতি। আর আমার ভাই ইউনিটের সভাপতি। কোনো সমস্যা নেই।’

এরপর ফুটপাতের দিকে নজর দেয়া যাক। যেখানে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের আসল পাঠ্যবই। এই দোকানদার প্রথমে চলতি শিক্ষাবর্ষের বই থাকার কথা অস্বীকার করলেও পরে নবম-দশমের আসল বই বের করে দেন। ভেতরে পাতা উল্টালে দেখা যায়, বইগুলো এনসিটিবির তালিকাভুক্ত আর্মি প্রিন্টিং প্রেস, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং এবং অনন্যা প্রিন্টার্সের বই।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং এ বছর এক কোটি নয় লাখ বইয়ের টেন্ডার পেলেও এখন পর্যন্ত ডেলিভারি দিয়েছে মাত্র সাড়ে ১৬ লাখ। বাজার থেকে সংগ্রহ করা বইটি দেখে তাদের বলে স্বীকারও করে প্রতিষ্ঠানটি।

সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিংয়ের দুলাল সরকার বলেন, ‘এটা আমাদেরই বানানো বই। আসলে সরকার আমাদের যে অর্ডার দিয়েছে। আমরা রুট লেভেলে থানায় পৌঁছাই। এই পৌঁছায় দেয়ার পরে যদি বই লাইব্রেরিতে থাকে, তাইলে সরকারের উপর লেভেল থেকে যদি তদন্ত করা যায় তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বইটা কীভাবে লাইব্রেরিতে আসলো।’

এসব অনিয়মের দায় কি এড়াতে পারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড?

এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলছেন, অনেক স্কুল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাহিদা দিয়ে তা বাজারে বিক্রি করে দেয়। যা উচিত নয় দাবি করে তিনি জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ অপরাধ করেও পার পাবে না।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কেউ যদি রাজনৈতিক পরিচয় যুক্ত করে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বাজারে, কালোবাজারে বিক্রি করে এটা অত্যন্ত কঠোর দণ্ডনীয় অপরাধযোগ্য একটি কাজ। কোনোভাবেই এটা মেনে নেয়ার মতো না। এবং তাকে শাস্তি দেয়া উচিত।’

এবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪০ কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের লক্ষ্য সরকারের। সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ বই প্রিন্ট হয়েছে আর ছাড়পত্র হয়েছে ৪৬ শতাংশ বইয়ের।