ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে : হাবিবুর রহমান হাবিব

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেছেন, একটি দল নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া না হলে দেশব্যাপী সকল দলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কারণ নির্বাচনের জন্যই এত গুম, খুন, নিষ্টুর নিযার্তনের শিকার হলাম। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এত রক্ত দিলাম, জীবন দিলাম। সেই নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। বিএনপিকে নিয়ে যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেনো যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যয় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাবেন।
মঙ্গলবার(১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী টেম্পু স্ট্যান্ডে শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টা মামলায় ফাঁসির রায় থেকে খালাস পাওয়া বিএনপির ৯ নেতাকে দেওয়া গণ-সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য কালে হাবিব এসব কথা বলেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পতনের জন্য সবদল মিলে আন্দোলন করেছি। রক্ত দিলাম। জীবন দিলাম। পঙ্গুত্ব বরণ করলাম। গুম, খুন ও নিষ্টুর নির্যাতনের শিকার হলাম। কৈই আমরা তো কোন সুযোগ গ্রহন করিনাই। তারাই তো সুযোগ ভোগ করছেন। অথচ একটি দল বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা নির্বাচনের আগে সংস্কার চাই। ক্ষমতাই থেকে দল গঠন করে নির্বাচন দিতে চান। ক্ষমতায় যেতে চান। এটা মেনে নেওয়া হবে না। এটা করার চেষ্টা করলে সব দল মিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
হাবিব আরও বলেন, বিএনপি নির্বাচন মুখি দল। অবশ্যয় নির্বাচনে যাবো। কারণ নির্বাচন না হলে নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমরা নির্বাচন চাইলেই আমাদের আওয়ামীলীগের দোসর বলা হয়। দেশদ্রোহী বলা হয়। যদি আমরা দেশদ্রোহী হই তাহলে ঈশ্বরদী বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে যে নির্মাম ও নিষ্টুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেওয়া কোন সাজা ভোগ করেননি। করেন নাই। তারপরও একটি দল বলছে নৌকা ও ধানের শীষ, দুই সাপের একই বিষ। কি নিষ্টুর কথা। নৌকা ও ধানের শিষ এক পতিক নয়। যারা এসব কথা বলছে তাদেরকে সাথে সাথে ধরে জিহ্বা কেটে কালো কুত্তা দিয়ে খাওয়ায়ে দিবেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ড.মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক মানুষ। কিন্তু বিগত ৬ মাসেও দেশের জন্য বিদেশী কোন বিনিয়োগকারীদের আনতে পারেননি। কারণ নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগকারীদের কখনই আসবে না। তাই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা আসতে হবে। নয়লে নতুন ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের আর্বিভাব হবে।
সদ্য কারামুক্ত ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মেয়র মো. মোখলেছুর রহমান বাবলু স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী দের উদ্দেশ্যে বলেন, ঈশ্বরদীতে আর কোন গ্রুপিং নেই। দলের বিরুদ্ধে হওয়া গভীর ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মান অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ বিএনপি না থাকলে দলের নেতাকর্মীদের কোন দাম নেই। আবার দেশে স্বৈরাচার আসবে। আমাকে আপনাকে বিতাড়িত করা হবে। নষ্যাৎ করা হবে।
সদস্য কারামুক্ত ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু বলেন, বিএনপির রাজনীতি নিয়ে অতিতে অনেক ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তাতে সুযোগ নিয়েছে অন্যরা। ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছি আমরা বিএনপি। তাই আর কোন গ্রুপিং নয়। উপজেলা ও পৌর বিএনপির মধ্যে কোন গ্রুপিং দেখতে চাই না। এখন থেকে আমরা সবাই ভাই ভাই।
সদ্য কারামুক্ত উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম ভিপি শাহিন বলেন, আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ৯০ দশকে ঈশ্বরদীতে বিএনপি যেমন সুসংগঠিত ও শক্তিশালী ছিল এখন আমরা সেইরুপ শক্তিশালি। তাই বিএনপিকে নিয়ে করা সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহতের বীজ আমরা ঈশ্বরদী থেকেই বপন করবো।
এর আগে সকালে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে বিভিন্ন ধরণের কয়েকশত পরিবহনে সহাস্রিধিক নেতাকর্মী রাজশাহী কারাগার থেকে কারামুক্ত নেতাদের রিসিভ করেন। এরপর মোটর শোভাযাত্রা ও বাদ্যযন্ত্রের সুরে এবং ফুলেল পাপড়ি ছিটিয়ে ঈশ্বরদী সংবর্ধনা মঞ্চে নিয়ে আসা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালিন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ট্রেন বহরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। এই মামলায় গত ২০১৯ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ ৪৭ নেতাকর্মীকে দন্ড প্রদান করেন। এর মধ্যে একই পরিবারের তিনভাইসহ ৯জনকে ফাঁসি, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এর পর থেকে ৪৭ নেতাকমর্ী কারাগারে বন্দি ছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর গত ২৭ আগষ্ট/২৪ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের আপিল বিভাগ প্রথমে ৩০ নেতাকর্মীকে জামিনে মুক্তি দেন। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি/২৫ একই আদালত ফাঁসির ৯ জনসহ মামলার সকল আসামীকে খালাস দিয়ে রায় প্রদান করেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী, সদ্যকারামুক্ত পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি একেএম আক্তারুজ্জামান, সদ্য কারামুক্ত উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আজিজুর রহমান শাহিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক জিয়াউল ইসলাম সন্টু সরদার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রকি, বিএনপি নেতা আহসান হাবিব, জাহিদুর রহমান পাতা, বিষ্টু সরকার, আব্দুর রাজ্জাক ফিরোজ, আমিনুর রহমান স্বপন, শামসুজ্জোহা পিপ্পু, আব্দুর রাজ্জাক, হুমায়ুন কবির দুলাল, সাহাবুদ্দিন সেন্টু,ইসলাম হোসেন জুয়েল, এনামুল হক,আনোয়ার হোসেন জুয়েল, জাহাঙ্গীর আলম, জাকির হোসেন জুয়েলসহ মামলা থেকে খালাস পাওয়া বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মী, তাদের পরিবার, ও বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক।
বাখ//আর