০২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকটে স্বাস্থ্যসেবার ফ্রন্টলাইনাররা

দিনাজপুরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) দীর্ঘদিনের বেতন বন্ধ

মোঃ খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকার পরিচালিত এই ক্লিনিকগুলো মাতৃমৃত্যু রোধ, শিশুর টিকাদান কর্মসূচি, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণসহ ১৬টি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে। তবে এই স্বাস্থ্যসেবাকে টিকিয়ে রাখার প্রধান চালিকাশক্তি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছেন।সাত মাস ধরে বেতনহীন সিএইচসিপিরা।
দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার ৩১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা গত সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় চরম অর্থনৈতিক দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

এদিকে হোসেনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. আব্দুল মান্নান বলেন,”বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সামান্য বেতনেই সংসার চালাতে কষ্ট হয়, সেখানে সাত মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছি।”কালিমেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি কালিদাস সরকার জানান, “সাত মাস ধরে বেতন নেই, এর মধ্যে পূজাও গেল, কিন্তু কোনো ভাতা পাইনি। যতটুকু সঞ্চয় ছিল, তাও শেষ। এখন আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই।” সঙ্কটের সমাধান কবে?

দিনাজপুর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিন পার হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত বেতন পরিশোধের দাবি জানাই।”সিভিল সার্জনের প্রতিক্রিয়া।

এ বিষয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ ফেরদৌস বলেন, “সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ থাকা আমাদের জন্যও কষ্টদায়ক। এটি শুধু দিনাজপুর নয়, বরং সারা দেশেই একই অবস্থা। আমরা বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করেছি এবং দ্রুত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
চাকরির রাজস্ব খাতে স্থানান্তর: আশ্বাসের বাস্তবায়ন নেই কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা ২০১১ সাল থেকে প্রকল্পভিত্তিক চাকরির আওতায় কাজ করছেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও বেতন বৃদ্ধি হয়নি।

গত বছরের জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন বন্ধ। এই অবস্থায় গত ২০ আগস্ট ঢাকায় আন্দোলনের পর সরকার সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে তারা প্রকল্প বা রাজস্ব—কোনো খাত থেকেই বেতন পাচ্ছেন না। সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা। কিন্তু সেখানে কর্মরত সিএইচসিপিরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেলে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমও ব্যাহত হবে।

সিএইচসিপিদের মতে, এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার টেকসই ব্যবস্থার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দ্রুত রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়টি বাস্তবায়ন না হলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সিএইচসিপিদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা এবং তাদের চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। তা না হলে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সংকটে পড়তে পারে।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১০:১৩:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১১৮ জন দেখেছেন

সংকটে স্বাস্থ্যসেবার ফ্রন্টলাইনাররা

দিনাজপুরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) দীর্ঘদিনের বেতন বন্ধ

আপডেট : ১০:১৩:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকার পরিচালিত এই ক্লিনিকগুলো মাতৃমৃত্যু রোধ, শিশুর টিকাদান কর্মসূচি, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণসহ ১৬টি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে আসছে। তবে এই স্বাস্থ্যসেবাকে টিকিয়ে রাখার প্রধান চালিকাশক্তি কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছেন।সাত মাস ধরে বেতনহীন সিএইচসিপিরা।
দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলার ৩১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা গত সাত মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় চরম অর্থনৈতিক দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

এদিকে হোসেনপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. আব্দুল মান্নান বলেন,”বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সামান্য বেতনেই সংসার চালাতে কষ্ট হয়, সেখানে সাত মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছি।”কালিমেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি কালিদাস সরকার জানান, “সাত মাস ধরে বেতন নেই, এর মধ্যে পূজাও গেল, কিন্তু কোনো ভাতা পাইনি। যতটুকু সঞ্চয় ছিল, তাও শেষ। এখন আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই।” সঙ্কটের সমাধান কবে?

দিনাজপুর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিন পার হচ্ছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত বেতন পরিশোধের দাবি জানাই।”সিভিল সার্জনের প্রতিক্রিয়া।

এ বিষয়ে দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ ফেরদৌস বলেন, “সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ থাকা আমাদের জন্যও কষ্টদায়ক। এটি শুধু দিনাজপুর নয়, বরং সারা দেশেই একই অবস্থা। আমরা বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করেছি এবং দ্রুত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
চাকরির রাজস্ব খাতে স্থানান্তর: আশ্বাসের বাস্তবায়ন নেই কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা ২০১১ সাল থেকে প্রকল্পভিত্তিক চাকরির আওতায় কাজ করছেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও বেতন বৃদ্ধি হয়নি।

গত বছরের জুলাই মাস থেকে তাদের বেতন বন্ধ। এই অবস্থায় গত ২০ আগস্ট ঢাকায় আন্দোলনের পর সরকার সিএইচসিপিদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে তারা প্রকল্প বা রাজস্ব—কোনো খাত থেকেই বেতন পাচ্ছেন না। সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা। কিন্তু সেখানে কর্মরত সিএইচসিপিরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেলে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমও ব্যাহত হবে।

সিএইচসিপিদের মতে, এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার টেকসই ব্যবস্থার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দ্রুত রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়টি বাস্তবায়ন না হলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সিএইচসিপিদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা এবং তাদের চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। তা না হলে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সংকটে পড়তে পারে।

বাখ//আর