০১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খেড়ের পুন বা খড়ের গাদা–হারিয়ে যাওয়া এক গ্রামীণ ঐতিহ্য

মো: খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক কৃষি ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল খড়, যা এখনও অনেক এলাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া, যান্ত্রিক কৃষি পদ্ধতি এবং শহুরে জীবনের পরিবর্তনে, খড়ের গাদা আজকাল অনেক জায়গায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

খড়ের পুন বা খড়ের গাদা: একটি ঐতিহ্য খড়ের গাদা বলতে বোঝানো হয়, ধান বা অন্য ফসলের পরিধান অংশ একত্রিত করে সংরক্ষণ করা, যা সাধারণত গবাদি পশু, জ্বালানি, এবং কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন যুগে, বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনযাত্রার সাথে খড়ের গাদা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। খড়ের গাদা শুধু কৃষকদের জীবনকেই সহজ করেনি, বরং গ্রামীণ পরিবেশে এটি ছিল এক ধরনের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য।
খড়ের গাদার ব্যবহার:

১. গবাদি পশুর খাদ্য: ধান কাটার পর অবশিষ্ট খড় গবাদি পশুদের খাবারের অন্যতম প্রধান উপাদান। এটি তাদের পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
২. জ্বালানি: খড় বাংলাদেশের গ্রামীণ households এ রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো, বিশেষ করে চুলায়।
৩. গৃহ নির্মাণ: খড়ের গাদা বিশেষত মাটির বাড়ির ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হত।
৪. জৈব সার: খড়ের পচনশীলতা কৃষিক্ষেত্রে সার হিসেবে ব্যবহৃত হতে সাহায্য করত।
৫. গো-শয্যা: গবাদি পশুদের আরামদায়ক থাকার স্থান হিসেবে খড় বিছানো হত।

হারিয়ে যাওয়ার কারণ:
আজকের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে খড়ের গাদা আগের মতো আর ব্যবহার হচ্ছে না। আধুনিক ধান কাটার যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার ধান কাটা শেষ করে দ্রুত ফসলের অবশিষ্ট অংশ জমি থেকে সরিয়ে ফেলে, যার ফলে খড়ের সঞ্চয় করার সুযোগ কমে গেছে। অন্যদিকে, শহর কেন্দ্রিক জীবনযাত্রা এবং গবাদি পশু পালনের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে খড়ের গাদার প্রয়োজনও আগের মতো তেমন নেই। এছাড়া, পেট্রল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ দ্বারা রান্না করা অধিকাংশ শহুরে বাড়িতে খড়ের ব্যবহার প্রায় একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।

আধুনিক জীবনে এর মূল্য ও গুরুত্ব: তবে, বর্তমানে খড়ের গাদা ব্যবহারের নানা উপকারিতা পুনরায় দেখা যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও জৈবিকভাবে শক্তিশালী। এতে করে গ্রামীণ জীবনে অবহেলিত এই ঐতিহ্য আবারও কৃষির সাথী হতে পারে।

একদিকে, যেখানে আধুনিকতা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে বিলীন করে দিচ্ছে, সেখানে খড়ের গাদাকে ঘিরে নতুন ধরনের জৈব কৃষি এবং কৃষির সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খড়ের গাদা এক নতুন পরিবেশবান্ধব কৃষি সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে, যা কেবল পরিবেশ নয়, কৃষকদেরও উপকারে আসবে।

তাই বলা যেতে পারেখড়ের গাদা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের একটি পুরনো ঐতিহ্য, যা এখন দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি আমরা এর মূল্য বুঝে পুনরায় এটির ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি, তাহলে এটি পরিবেশবান্ধব কৃষির একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। তাই, আমাদের উচিত খড়ের গাদাকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা এবং এর ঐতিহ্য ও উপকারিতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৮:২১:৫৫ অপরাহ্ন, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৯১ জন দেখেছেন

খেড়ের পুন বা খড়ের গাদা–হারিয়ে যাওয়া এক গ্রামীণ ঐতিহ্য

আপডেট : ০৮:২১:৫৫ অপরাহ্ন, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক কৃষি ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল খড়, যা এখনও অনেক এলাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া, যান্ত্রিক কৃষি পদ্ধতি এবং শহুরে জীবনের পরিবর্তনে, খড়ের গাদা আজকাল অনেক জায়গায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

খড়ের পুন বা খড়ের গাদা: একটি ঐতিহ্য খড়ের গাদা বলতে বোঝানো হয়, ধান বা অন্য ফসলের পরিধান অংশ একত্রিত করে সংরক্ষণ করা, যা সাধারণত গবাদি পশু, জ্বালানি, এবং কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীন যুগে, বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনযাত্রার সাথে খড়ের গাদা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। খড়ের গাদা শুধু কৃষকদের জীবনকেই সহজ করেনি, বরং গ্রামীণ পরিবেশে এটি ছিল এক ধরনের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য।
খড়ের গাদার ব্যবহার:

১. গবাদি পশুর খাদ্য: ধান কাটার পর অবশিষ্ট খড় গবাদি পশুদের খাবারের অন্যতম প্রধান উপাদান। এটি তাদের পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
২. জ্বালানি: খড় বাংলাদেশের গ্রামীণ households এ রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো, বিশেষ করে চুলায়।
৩. গৃহ নির্মাণ: খড়ের গাদা বিশেষত মাটির বাড়ির ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হত।
৪. জৈব সার: খড়ের পচনশীলতা কৃষিক্ষেত্রে সার হিসেবে ব্যবহৃত হতে সাহায্য করত।
৫. গো-শয্যা: গবাদি পশুদের আরামদায়ক থাকার স্থান হিসেবে খড় বিছানো হত।

হারিয়ে যাওয়ার কারণ:
আজকের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে খড়ের গাদা আগের মতো আর ব্যবহার হচ্ছে না। আধুনিক ধান কাটার যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার ধান কাটা শেষ করে দ্রুত ফসলের অবশিষ্ট অংশ জমি থেকে সরিয়ে ফেলে, যার ফলে খড়ের সঞ্চয় করার সুযোগ কমে গেছে। অন্যদিকে, শহর কেন্দ্রিক জীবনযাত্রা এবং গবাদি পশু পালনের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে খড়ের গাদার প্রয়োজনও আগের মতো তেমন নেই। এছাড়া, পেট্রল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ দ্বারা রান্না করা অধিকাংশ শহুরে বাড়িতে খড়ের ব্যবহার প্রায় একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।

আধুনিক জীবনে এর মূল্য ও গুরুত্ব: তবে, বর্তমানে খড়ের গাদা ব্যবহারের নানা উপকারিতা পুনরায় দেখা যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও জৈবিকভাবে শক্তিশালী। এতে করে গ্রামীণ জীবনে অবহেলিত এই ঐতিহ্য আবারও কৃষির সাথী হতে পারে।

একদিকে, যেখানে আধুনিকতা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে বিলীন করে দিচ্ছে, সেখানে খড়ের গাদাকে ঘিরে নতুন ধরনের জৈব কৃষি এবং কৃষির সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খড়ের গাদা এক নতুন পরিবেশবান্ধব কৃষি সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে, যা কেবল পরিবেশ নয়, কৃষকদেরও উপকারে আসবে।

তাই বলা যেতে পারেখড়ের গাদা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের একটি পুরনো ঐতিহ্য, যা এখন দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যদি আমরা এর মূল্য বুঝে পুনরায় এটির ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি, তাহলে এটি পরিবেশবান্ধব কৃষির একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। তাই, আমাদের উচিত খড়ের গাদাকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা এবং এর ঐতিহ্য ও উপকারিতা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

বাখ//আর