০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই আন্দোলনে বিতর্কিত পোস্ট, কলাপাড়ায় চিকিৎসকের শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর 

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পদোন্নতি পেয়ে সদ্য যোগদান করা চিকিৎসক ড. জে এইচ খান লেলিনের অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মাঠে এ গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেন কলাপাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে গত মঙ্গলবার ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে একই দাবিতে কলাপাড়া প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাপাড়ার সমন্বয়করা।
ডা: লেলীনকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেয়া একটি পোস্টকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। দ্রুত বিষয় টি ভাইরাল হয় যেখানে লেখা রয়েছে ‘ দে দে মরন কামড় দে, দেরি করিস না। অস্তিত্বে বাংলাদেশ শেখ হাসিনা। এই লেখার সাথে ডাক্তার জে এইচ খান লেলিনের ছবি যোগ করে তাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি বাতিলের দাবি করা হয়েছে। কেউ বা বিচার দাবি করেছেন।
অভিযোগ রয়েছেন, তিনি দীর্ঘ এক যুগের ও বেশি কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিগত আ.লীগ সরকারের তৎকালীন নেতাদের যোগসাজশে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। রোগীদের সাথে অসদাচরণ, টেস্ট বানিজ্য, সরকারি জমি বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, অবহেলায় তার হাতে মৃত্যু হয়েছে অনেক রোগী এমন অহরহ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন রকম টেস্ট দিয়ে তার নিজস্ব ক্লিনিক ম্যাক্স এবং কলাপাড়া ক্লিনিকে টেস্ট করাতে বাধ্য করেন রোগীদের।
অভিযোগ রয়েছে , ২০২১ সালে ডা. লেলিনের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ রুনা (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর হয়। মৃত্যু প্রসূতি রুনা কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জসিমের স্ত্রী। ২০২২ সালে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাউবোর সরকারি জায়গার পজিশন বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলাও হয়েছিলো।
কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালত এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পটুয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিচার কাজ থেমে যায়। উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের মোসা. মরিয়ম জাহান নূপুর প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে ডা. লেলিনের নামে এ মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালে তার ভুল চিকিৎসায় স্বপন সিকদার নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছিলেন উপজেলা আইনজীবী কল্যাণ সমিতি। এ কর্মসূচিতে স্বপন সিকদারের স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা ছাত্র প্রতিনিধি মাশরাফি কামাল শাফি বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসর লেলিনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছি। গত মঙ্গলবার একই দাবিতে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি। আজ গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে উপজেলার ৮০০ মানুষ সাক্ষর করেছেন। আমরা এগুলো জেলা প্রশাসক , সিভিল সার্জন ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করবো। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন রকম কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ড. লেলিন বলেন, ল্যাব সংশ্লিষ্ট কেউ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল ও আমাকে হেও প্রতিপন্ন  করতে আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ সময় তিনি প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কলাপাড়া ও ম্যাক্স ক্লিনিকে তার শেয়ারের কথাও অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ড. হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাখ//এস

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৫:০৭:৫৮ অপরাহ্ন, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৯১ জন দেখেছেন

জুলাই আন্দোলনে বিতর্কিত পোস্ট, কলাপাড়ায় চিকিৎসকের শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর 

আপডেট : ০৫:০৭:৫৮ অপরাহ্ন, রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পদোন্নতি পেয়ে সদ্য যোগদান করা চিকিৎসক ড. জে এইচ খান লেলিনের অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মাঠে এ গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেন কলাপাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে গত মঙ্গলবার ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে একই দাবিতে কলাপাড়া প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাপাড়ার সমন্বয়করা।
ডা: লেলীনকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেয়া একটি পোস্টকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। দ্রুত বিষয় টি ভাইরাল হয় যেখানে লেখা রয়েছে ‘ দে দে মরন কামড় দে, দেরি করিস না। অস্তিত্বে বাংলাদেশ শেখ হাসিনা। এই লেখার সাথে ডাক্তার জে এইচ খান লেলিনের ছবি যোগ করে তাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি বাতিলের দাবি করা হয়েছে। কেউ বা বিচার দাবি করেছেন।
অভিযোগ রয়েছেন, তিনি দীর্ঘ এক যুগের ও বেশি কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিগত আ.লীগ সরকারের তৎকালীন নেতাদের যোগসাজশে হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। কয়েক বছরে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। রোগীদের সাথে অসদাচরণ, টেস্ট বানিজ্য, সরকারি জমি বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ, অবহেলায় তার হাতে মৃত্যু হয়েছে অনেক রোগী এমন অহরহ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন রকম টেস্ট দিয়ে তার নিজস্ব ক্লিনিক ম্যাক্স এবং কলাপাড়া ক্লিনিকে টেস্ট করাতে বাধ্য করেন রোগীদের।
অভিযোগ রয়েছে , ২০২১ সালে ডা. লেলিনের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ রুনা (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর হয়। মৃত্যু প্রসূতি রুনা কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জসিমের স্ত্রী। ২০২২ সালে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাউবোর সরকারি জায়গার পজিশন বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলাও হয়েছিলো।
কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালত এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), পটুয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিচার কাজ থেমে যায়। উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের মোসা. মরিয়ম জাহান নূপুর প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে ডা. লেলিনের নামে এ মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালে তার ভুল চিকিৎসায় স্বপন সিকদার নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছিলেন উপজেলা আইনজীবী কল্যাণ সমিতি। এ কর্মসূচিতে স্বপন সিকদারের স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা ছাত্র প্রতিনিধি মাশরাফি কামাল শাফি বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসর লেলিনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছি। গত মঙ্গলবার একই দাবিতে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি। আজ গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে উপজেলার ৮০০ মানুষ সাক্ষর করেছেন। আমরা এগুলো জেলা প্রশাসক , সিভিল সার্জন ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করবো। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন রকম কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ড. লেলিন বলেন, ল্যাব সংশ্লিষ্ট কেউ ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল ও আমাকে হেও প্রতিপন্ন  করতে আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ সময় তিনি প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কলাপাড়া ও ম্যাক্স ক্লিনিকে তার শেয়ারের কথাও অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ড. হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাখ//এস