০২:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো মানুষের ছায়ায় জীবনের সৌন্দর্য!

লেখক-রাজু আহমেদ

আপনার নামে যখন আলোচনা হয় কিংবা গল্পের আসর জমে তখন আপনার পরিবারের মানুষ, আপনাকে চেনা মানুষ- তাদের কেউ যখন আপনার ভালো কিছু খুঁজে না পায়, তখন আপনি দুর্ভাগা! যতদূর আপনার নাম যায়- সবাই গালি দেয়, মন্দ বলে। বাজে লোক বলে তকমা তোলে! এমন জীবনের মানে কী? নীতিকথার ওয়াজ করা কত সহজ, আওয়াজ তোলা ডাল-ভাত অথচ আপনার অন্ধকার দিকে মানুষ ঘৃণাভরে থুতু নিক্ষেপ করে। মন্দ স্বভাব গোপন করলেও চারদিকে সেসব জানা মানুষের অভাব নাই। একটা মানুষ কত খারাপ হলে তার একটুও ভালো কেউ বলে না! মুখোশের আড়ালে যে মুখ তাতে মাছি উড়ে, পোকা পড়ে!

‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি/কাঁদিবে ভুবন’- অথচ আপনার জীবনের সাথে বাস্তবতা মিলিয়ে দেখুন। কেউ পছন্দ করে না। স্বেচ্ছায় কিংবা ইচ্ছায় কেউ কাছে ভেড়ে না। আমাদের জীবন ত্যাগের জীবন হোক। রুচিসম্মত সৌন্দর্যে সাজানো ফুলের মত সুবাসিত হোক। অর্থের কাছে বিক্রি হওয়া, ক্ষমতার পদতলে নুইয়ে পড়ে স্বার্থ উদ্ধার করা এবং মানুষকে ব্যবহার করা- কোনো ভালো মানুষের কাজ নয়। কেবল সার্টিফিকেটধারীকে শিক্ষিত বলা যায় না। শিক্ষার আলো সমাজে পড়তে হয়। চারপাশে আলোকচ্ছটা সৃষ্টি করতে হয়। অথচ অন্ধকার। যত গভীরে যাই তত নীল। লোভ-মোহের দেনদরবার। মুখের কথা এবং কাজ- যাদের ভিন্ন ভিন্ন তারা মানুষ হিসেবে অমানুষ।

সবকিছু এখনো পুরোপুরি পচে যায়নি। নষ্টরা সবকিছু এখনো দখলে নিতে পারেনি। ভ্রষ্টা এখনও স্রষ্টার নাগাল পায়নি। যখন মন্দ লোকের মিছিল দেখি তখনও সসম্মানে আরও পাঁচজন মানুষ সম্পর্কে ভালোর আলোর গল্প শুনি। লোভ যাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি, নীতিহীনতায় যারা ডুবে যায় নি এবং মানুষের উপকারে আসতে যারা ভুলে যায় নি- তেমন বাতিঘর সমাজে অপ্রতুল হলেও আছে। তাদের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত হয়ে আসে। দুবার সালাম করে আরও পুণ্য কামাইয়ের ইচ্ছা জাগে। একটু সংস্পর্শে গিয়ে জীবনকে ধন্য করার সাধ জাগে। মন্দ লোকের বদনাম শুনতে শুনতে ভালো মানুষগুলোর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তৈরি হয়। মন থেকে দোয়া আসে। একজীবনে অচেনা মানুষের এরচেয়ে বড় অর্জন কী? এই জীবনে আর কী লাগে?

মন্দ আছে বলে ভালোর মূল্য দিতে পারি। বিবেক আছে বলে সবার কথা শুনেও ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারি। খারাপ মানুষ অনেক কিছুতে বাধ্য করতে পারে কিন্তু চিন্তার বাঁক বদল ঘটাতে পারে না। খারাপ নেশা ধরাতে পারে তবে চিরকাল মনকে আবিষ্ট রাখতে পারে না। একসময় ঘোর কাটে। আলো এসে বিবেকে আঘাত করে। সত্য জানিয়ে দেয়। জীবনের ঝুলিতে ভালো মানুষের মত বড় ও দামি কোনো সঞ্চয় নাই। ভাগ্যবশত কেউ পায় আবার কেউ দূর থেকে দেখে দেখে মন ভরে। ভালো মানুষের সঙ্গ পাওয়া মানে মুক্তির পথে পা বাড়িয়ে দেওয়া। সহজ-সরল জীবনদর্শন দিশা পাওয়া। তখন জীবনের সবকিছু উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

ভালো মানুষের দুঃখ থাকবে। সৌন্দর্যের প্রতি লোভ থাকবে। মুখের কথার সাথে বুকের বিশ্বাসের মিল থাকবে। যারা মুখোশ দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতে চায়, গল্পের আড়ালে সত্য লুকাতে যায় তারা কপটচারী-ধোঁকাবাজ। মাথার ওপরে ভালো মানুষের ছায়া থাকা মানে জীবনের ভিত ঐশ্বরিক উপাদানে মনোরম করে গড়া। খারাপ মানুষেরও বদলে যাওয়া উচিত। চিরকাল সত্য প্রকাশিত, মিথ্যা বিতাড়িত। ক্ষমতার ধারা একদিন নিম্নমুখী হবে। সব বাহাদুরি ফুরিয়ে যাবে। সেদিন যদি লোকে ভালো মানুষ না বলে তবে ব্যাংক-ব্যালেন্স ব্যর্থতাকে দীর্ঘায়িত করবে। সন্তান-সম্পদ বোঝা হবে। মানুষের জীবন মানুষের মত হোক। হায়েনা-দুর্বৃত্তের জীবনপ্রবাহের মত হওয়ার জন্য জানোয়ারদের জীবনকে বরাদ্দ করা হয়েছে! মানুষ কেনো তেমন জীবনের আকাঙ্ক্ষা করবে?

[এই বিভাগের লেখা লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত এ বিভাগের লেখার সাথে বাংলা খবর বিডির সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে]

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১০:৪৩:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
১২০ জন দেখেছেন

ভালো মানুষের ছায়ায় জীবনের সৌন্দর্য!

আপডেট : ১০:৪৩:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আপনার নামে যখন আলোচনা হয় কিংবা গল্পের আসর জমে তখন আপনার পরিবারের মানুষ, আপনাকে চেনা মানুষ- তাদের কেউ যখন আপনার ভালো কিছু খুঁজে না পায়, তখন আপনি দুর্ভাগা! যতদূর আপনার নাম যায়- সবাই গালি দেয়, মন্দ বলে। বাজে লোক বলে তকমা তোলে! এমন জীবনের মানে কী? নীতিকথার ওয়াজ করা কত সহজ, আওয়াজ তোলা ডাল-ভাত অথচ আপনার অন্ধকার দিকে মানুষ ঘৃণাভরে থুতু নিক্ষেপ করে। মন্দ স্বভাব গোপন করলেও চারদিকে সেসব জানা মানুষের অভাব নাই। একটা মানুষ কত খারাপ হলে তার একটুও ভালো কেউ বলে না! মুখোশের আড়ালে যে মুখ তাতে মাছি উড়ে, পোকা পড়ে!

‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি/কাঁদিবে ভুবন’- অথচ আপনার জীবনের সাথে বাস্তবতা মিলিয়ে দেখুন। কেউ পছন্দ করে না। স্বেচ্ছায় কিংবা ইচ্ছায় কেউ কাছে ভেড়ে না। আমাদের জীবন ত্যাগের জীবন হোক। রুচিসম্মত সৌন্দর্যে সাজানো ফুলের মত সুবাসিত হোক। অর্থের কাছে বিক্রি হওয়া, ক্ষমতার পদতলে নুইয়ে পড়ে স্বার্থ উদ্ধার করা এবং মানুষকে ব্যবহার করা- কোনো ভালো মানুষের কাজ নয়। কেবল সার্টিফিকেটধারীকে শিক্ষিত বলা যায় না। শিক্ষার আলো সমাজে পড়তে হয়। চারপাশে আলোকচ্ছটা সৃষ্টি করতে হয়। অথচ অন্ধকার। যত গভীরে যাই তত নীল। লোভ-মোহের দেনদরবার। মুখের কথা এবং কাজ- যাদের ভিন্ন ভিন্ন তারা মানুষ হিসেবে অমানুষ।

সবকিছু এখনো পুরোপুরি পচে যায়নি। নষ্টরা সবকিছু এখনো দখলে নিতে পারেনি। ভ্রষ্টা এখনও স্রষ্টার নাগাল পায়নি। যখন মন্দ লোকের মিছিল দেখি তখনও সসম্মানে আরও পাঁচজন মানুষ সম্পর্কে ভালোর আলোর গল্প শুনি। লোভ যাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি, নীতিহীনতায় যারা ডুবে যায় নি এবং মানুষের উপকারে আসতে যারা ভুলে যায় নি- তেমন বাতিঘর সমাজে অপ্রতুল হলেও আছে। তাদের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত হয়ে আসে। দুবার সালাম করে আরও পুণ্য কামাইয়ের ইচ্ছা জাগে। একটু সংস্পর্শে গিয়ে জীবনকে ধন্য করার সাধ জাগে। মন্দ লোকের বদনাম শুনতে শুনতে ভালো মানুষগুলোর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তৈরি হয়। মন থেকে দোয়া আসে। একজীবনে অচেনা মানুষের এরচেয়ে বড় অর্জন কী? এই জীবনে আর কী লাগে?

মন্দ আছে বলে ভালোর মূল্য দিতে পারি। বিবেক আছে বলে সবার কথা শুনেও ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারি। খারাপ মানুষ অনেক কিছুতে বাধ্য করতে পারে কিন্তু চিন্তার বাঁক বদল ঘটাতে পারে না। খারাপ নেশা ধরাতে পারে তবে চিরকাল মনকে আবিষ্ট রাখতে পারে না। একসময় ঘোর কাটে। আলো এসে বিবেকে আঘাত করে। সত্য জানিয়ে দেয়। জীবনের ঝুলিতে ভালো মানুষের মত বড় ও দামি কোনো সঞ্চয় নাই। ভাগ্যবশত কেউ পায় আবার কেউ দূর থেকে দেখে দেখে মন ভরে। ভালো মানুষের সঙ্গ পাওয়া মানে মুক্তির পথে পা বাড়িয়ে দেওয়া। সহজ-সরল জীবনদর্শন দিশা পাওয়া। তখন জীবনের সবকিছু উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

ভালো মানুষের দুঃখ থাকবে। সৌন্দর্যের প্রতি লোভ থাকবে। মুখের কথার সাথে বুকের বিশ্বাসের মিল থাকবে। যারা মুখোশ দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করতে চায়, গল্পের আড়ালে সত্য লুকাতে যায় তারা কপটচারী-ধোঁকাবাজ। মাথার ওপরে ভালো মানুষের ছায়া থাকা মানে জীবনের ভিত ঐশ্বরিক উপাদানে মনোরম করে গড়া। খারাপ মানুষেরও বদলে যাওয়া উচিত। চিরকাল সত্য প্রকাশিত, মিথ্যা বিতাড়িত। ক্ষমতার ধারা একদিন নিম্নমুখী হবে। সব বাহাদুরি ফুরিয়ে যাবে। সেদিন যদি লোকে ভালো মানুষ না বলে তবে ব্যাংক-ব্যালেন্স ব্যর্থতাকে দীর্ঘায়িত করবে। সন্তান-সম্পদ বোঝা হবে। মানুষের জীবন মানুষের মত হোক। হায়েনা-দুর্বৃত্তের জীবনপ্রবাহের মত হওয়ার জন্য জানোয়ারদের জীবনকে বরাদ্দ করা হয়েছে! মানুষ কেনো তেমন জীবনের আকাঙ্ক্ষা করবে?

[এই বিভাগের লেখা লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত এ বিভাগের লেখার সাথে বাংলা খবর বিডির সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে]