০৭:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্কার: সেরা ছবি আনোরা, সেরা অভিনেতা অ্যাড্রিয়ান ব্রডি

অনলাইন ডেস্ক

এ যেন উলট পুরাণ। সিনেমার শেষটা রূপকথার মতো হয়নি। ব্রুকলিনের স্ট্রিপার আনোরার (মাইকি ম্যাডিসন) জীবনটা সিন্ডেরেলার মতো হতে হতেও শেষ পর্যন্ত হয় না। অথচ বাস্তবে স্বপ্নের পরিণতি পেল শন বেকারের ছবি আনোরা। সেরা ছবি, অভিনেত্রী এবং পরিচালক-সহ পাঁচটা অস্কার ঘরে তুলল তারা।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অঁর পাওয়া এই ছবিটি এবছরের অস্কার দৌড়ে খানিকটা কালো ঘোড়া ছিল। ব্রুকলিনের স্ট্রিপ ক্লাব থেকে রুশ ধনকুবেরের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া আনোরা একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম। ড্যুন টু বা দ্য ব্রুটালিস্টের তুলনায় অত্যন্ত কম বাজেটের, মাত্র ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলারে তৈরি হয়েছে এই ছবি। এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ান্সের মতো আরো একবার স্বাধীন ছবিকে কুর্নিশ জানালো এবছরের অস্কার। ডলবি মঞ্চ থেকে শনের উচ্ছ্বাস, ”লং লিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম (স্বাধীন ছবি দীর্ঘজীবি হোক)।”

মাইকি ম্যাডিসন, শন বেকার ছাড়াও সেরা চিত্রনাট্য এবং এডিটিং এর পুরষ্কার পেয়েছে আনোরা। অন্যদিকে, দ্বিতীয়বার সেরা অভিনেতার পুরষ্কার পেলেন অ্যাড্রিয়ান ব্রডি। বাইশ বছর আগে রোমান পোলান্সকির দ্য পিয়ানিস্টের জন্য প্রথমবার সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছিলেন ব্রডি।

পিয়ানিস্টে তার চরিত্র ছিল এক পোলিশ-ইহুদি পিয়ানো বাদকের। ব্রুটালিস্টে তার চরিত্র হলোকস্ট থেকে বেঁচে আমেরিকায় চলে আসা এক হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি আর্কিটেক্টের। অস্কার মঞ্চে ব্রডি বলেন, “আরো একবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত ট্রমার গল্প বলে আমি এই পুরষ্কার পাচ্ছি। এই গল্পগুলো বর্ণবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষ এবং পৃথকীকরণের নিপীড়ন মনে করিয়ে দেয়। আমি প্রার্থনা করি যেন এই সমাজ সুস্থ, স্বাভাবিক এবং আরো নিবিড় অন্তর্ভুক্তিকরণের আশ্বাস দেয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘৃণাকে যেন আমরা স্থান না দিই।”

সেরা অভিনেত্রীর দৌড়ে দ্য সাবস্টেন্স ছবির জন্য এবছরের ফেভারিট ছিলেন ডেমি ম্যুর। তাকে হারিয়ে অস্কার জিতলেন মাইকি। পুরষ্কার হাতে নিয়ে যৌনকর্মীদের প্রতি তার শ্রদ্ধা জানান অভিনেত্রী।

জ্যাক অডিয়ারের এমিলিয়া পেরেজের জন্য সেরা সহ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পেলেন জোই সালডানহা। জেসি আইজেনবার্গের আ রিয়াল পেইনের জন্য সেরা সহ অভিনেতার অস্কার পেলেন কিয়েরান কালকিন।

নেটফ্লিক্সের এমিলিয়া পেরেজ এবার প্রায় ১৩টি নমিনেশন পেয়ে শুরুতেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকে একের পর এক বিতর্ক শুরু হয় ছবিটি ঘিরে। অভিনেত্রী কার্লা সোফিয়া গ্রাসোঁর একটি টুইট নিয়ে বিতর্ক চলে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জোই সালডানহা ছাড়া সেরা গানের পুরষ্কার পেয়েছে ছবিটি।

মঞ্চ থেকে জোই বলেন, “আমি অভিবাসী পরিবারের সন্তান। আমার পরিবারের স্বপ্ন, সম্মান এবং পরিশ্রম আমাকে গর্বিত করে। আমি প্রথম আমেরিকান-ডমিনিকান যে এই পুরস্কার পেল। আমি নিশ্চিত যে আমিই শেষ নই।”

ফিলিস্তিন-ইজরায়েলি তথ্যচিত্র নো আদার ল্যান্ড সেরা ফিচার ডকুমেন্টারির পুরষ্কার পেয়েছে। দুই দেশের চার সমাজকর্মী বাসেল আদ্রা, রাচেল সর, হামদান বাল্লাল এবং ইয়ুভ্যাল আব্রাহামের তৈরি এই তথ্যচিত্র আমেরিকাতে কোনো পরিবেশক জোগাড় করতে পারেনি। পরে তারা নিজেরাই পরিবেশনা করেন। নো আদার ল্যান্ড এবছরে বাণিজ্যিক ভাবে সবথেকে সফল তথ্যচিত্র।

এবারের অস্কারের মঞ্চে শ্রদ্ধা জানানো হয় জেমস বন্ড কে। তাও একেবারে নাচে গানে। দোজা ক্যাট, লিসা ও রে গানে গানে জেমস বন্ডকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। গানের সঙ্গে ছিল এ সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী মারগারেট কোয়ালির নাচ। অস্কার আয়োজনের শুরুতে এমন নাচ জমিয়ে দেয় পুরো আয়োজন।

১৯৭৩ সালের জেমস বন্ড সিনেমা ‘লিভ অ্যান্ড লিভ লিভ’-এর থিম সং ধরেন ব্ল্যাকপিংক গায়িকা লিসা, এরপর দোজা ক্যাট শোনান ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার’-এর থিম, সবশেষে রে পরিবেশন করেন ‘স্কাইফল’-এর গান। এসসি/জিএইচ(এপি, এএফপি, রয়টার্স)

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:৫০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
৯০ জন দেখেছেন

অস্কার: সেরা ছবি আনোরা, সেরা অভিনেতা অ্যাড্রিয়ান ব্রডি

আপডেট : ০১:৫০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

এ যেন উলট পুরাণ। সিনেমার শেষটা রূপকথার মতো হয়নি। ব্রুকলিনের স্ট্রিপার আনোরার (মাইকি ম্যাডিসন) জীবনটা সিন্ডেরেলার মতো হতে হতেও শেষ পর্যন্ত হয় না। অথচ বাস্তবে স্বপ্নের পরিণতি পেল শন বেকারের ছবি আনোরা। সেরা ছবি, অভিনেত্রী এবং পরিচালক-সহ পাঁচটা অস্কার ঘরে তুলল তারা।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অঁর পাওয়া এই ছবিটি এবছরের অস্কার দৌড়ে খানিকটা কালো ঘোড়া ছিল। ব্রুকলিনের স্ট্রিপ ক্লাব থেকে রুশ ধনকুবেরের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া আনোরা একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম। ড্যুন টু বা দ্য ব্রুটালিস্টের তুলনায় অত্যন্ত কম বাজেটের, মাত্র ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলারে তৈরি হয়েছে এই ছবি। এভরিথিং এভরিহোয়ার অল অ্যাট ওয়ান্সের মতো আরো একবার স্বাধীন ছবিকে কুর্নিশ জানালো এবছরের অস্কার। ডলবি মঞ্চ থেকে শনের উচ্ছ্বাস, ”লং লিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম (স্বাধীন ছবি দীর্ঘজীবি হোক)।”

মাইকি ম্যাডিসন, শন বেকার ছাড়াও সেরা চিত্রনাট্য এবং এডিটিং এর পুরষ্কার পেয়েছে আনোরা। অন্যদিকে, দ্বিতীয়বার সেরা অভিনেতার পুরষ্কার পেলেন অ্যাড্রিয়ান ব্রডি। বাইশ বছর আগে রোমান পোলান্সকির দ্য পিয়ানিস্টের জন্য প্রথমবার সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছিলেন ব্রডি।

পিয়ানিস্টে তার চরিত্র ছিল এক পোলিশ-ইহুদি পিয়ানো বাদকের। ব্রুটালিস্টে তার চরিত্র হলোকস্ট থেকে বেঁচে আমেরিকায় চলে আসা এক হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি আর্কিটেক্টের। অস্কার মঞ্চে ব্রডি বলেন, “আরো একবার যুদ্ধ বিধ্বস্ত ট্রমার গল্প বলে আমি এই পুরষ্কার পাচ্ছি। এই গল্পগুলো বর্ণবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষ এবং পৃথকীকরণের নিপীড়ন মনে করিয়ে দেয়। আমি প্রার্থনা করি যেন এই সমাজ সুস্থ, স্বাভাবিক এবং আরো নিবিড় অন্তর্ভুক্তিকরণের আশ্বাস দেয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘৃণাকে যেন আমরা স্থান না দিই।”

সেরা অভিনেত্রীর দৌড়ে দ্য সাবস্টেন্স ছবির জন্য এবছরের ফেভারিট ছিলেন ডেমি ম্যুর। তাকে হারিয়ে অস্কার জিতলেন মাইকি। পুরষ্কার হাতে নিয়ে যৌনকর্মীদের প্রতি তার শ্রদ্ধা জানান অভিনেত্রী।

জ্যাক অডিয়ারের এমিলিয়া পেরেজের জন্য সেরা সহ অভিনেত্রীর পুরষ্কার পেলেন জোই সালডানহা। জেসি আইজেনবার্গের আ রিয়াল পেইনের জন্য সেরা সহ অভিনেতার অস্কার পেলেন কিয়েরান কালকিন।

নেটফ্লিক্সের এমিলিয়া পেরেজ এবার প্রায় ১৩টি নমিনেশন পেয়ে শুরুতেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকে একের পর এক বিতর্ক শুরু হয় ছবিটি ঘিরে। অভিনেত্রী কার্লা সোফিয়া গ্রাসোঁর একটি টুইট নিয়ে বিতর্ক চলে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জোই সালডানহা ছাড়া সেরা গানের পুরষ্কার পেয়েছে ছবিটি।

মঞ্চ থেকে জোই বলেন, “আমি অভিবাসী পরিবারের সন্তান। আমার পরিবারের স্বপ্ন, সম্মান এবং পরিশ্রম আমাকে গর্বিত করে। আমি প্রথম আমেরিকান-ডমিনিকান যে এই পুরস্কার পেল। আমি নিশ্চিত যে আমিই শেষ নই।”

ফিলিস্তিন-ইজরায়েলি তথ্যচিত্র নো আদার ল্যান্ড সেরা ফিচার ডকুমেন্টারির পুরষ্কার পেয়েছে। দুই দেশের চার সমাজকর্মী বাসেল আদ্রা, রাচেল সর, হামদান বাল্লাল এবং ইয়ুভ্যাল আব্রাহামের তৈরি এই তথ্যচিত্র আমেরিকাতে কোনো পরিবেশক জোগাড় করতে পারেনি। পরে তারা নিজেরাই পরিবেশনা করেন। নো আদার ল্যান্ড এবছরে বাণিজ্যিক ভাবে সবথেকে সফল তথ্যচিত্র।

এবারের অস্কারের মঞ্চে শ্রদ্ধা জানানো হয় জেমস বন্ড কে। তাও একেবারে নাচে গানে। দোজা ক্যাট, লিসা ও রে গানে গানে জেমস বন্ডকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। গানের সঙ্গে ছিল এ সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী মারগারেট কোয়ালির নাচ। অস্কার আয়োজনের শুরুতে এমন নাচ জমিয়ে দেয় পুরো আয়োজন।

১৯৭৩ সালের জেমস বন্ড সিনেমা ‘লিভ অ্যান্ড লিভ লিভ’-এর থিম সং ধরেন ব্ল্যাকপিংক গায়িকা লিসা, এরপর দোজা ক্যাট শোনান ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার’-এর থিম, সবশেষে রে পরিবেশন করেন ‘স্কাইফল’-এর গান। এসসি/জিএইচ(এপি, এএফপি, রয়টার্স)