১২:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঁচতে চায় গৃহবধু পূর্ণিমা

আমার দুই সন্তানকে দেখে রাখবেন : বুকফাটা আকুতি

নওগাঁ প্রতিনিধি

ঘড়ির কাটায় রাত ১০টা। ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে, চলছে কান্নাকাটি। দুই পাশে ছোট্র দুই সন্তান। আরও আছে পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা। কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, কেউবা বুকে। আর কেউ কেউ ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখন বাড়িতে এটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে ঘুম নেই কারো চোখে। এমনকি ছোট দুটি সন্তানেরও। শরীরে নানা রোগ নিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন পার করছে পূর্ণিমা নামের এক গ্রহবধু।

পুর্ণিমা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল হিন্দু পাড়া গ্রামের ডাবলু প্রামানিকের স্ত্রী। ৩২ বছরের দুই সন্তানের এই গৃহবধু পূর্ণিমার শরীরে কিডনি, ফুঁসফুঁসসহ লিভারে সমস্যা ধরা পড়েছে। বর্তমানে তার চিকিৎসা ব্যয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। তাই বাড়িতে রেখেই ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধ কিনে খাওয়াচ্ছে (তাও অন্য কারো সহযোগিতায়)। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অসহার পরিবার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। দশ বছরের ছেলে ও ৬বছরের মেয়ে এবং আধা পাগল স্বামীকে নিয়ে কোনমতে চলছিল সংসার। এরমধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরণের রোগ। কখনও নওগাঁ, কখনওবা বগুড়া, আবার কখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার আশায় দৌড়াদৌড়ি। হত-দরিদ্র অসহায় পরিবারটির চিকিৎসার ব্যয় বহন করা এ যেন এক স্বপ্নের মতো। তারউপর আবার বিভিন্ন ওষুধসহ পরীক্ষা নিরীক্ষা।

তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করে ইতোমধ্যে পরিবারটি সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছে না। উন্নত চিকিৎসার অভাবে তাকে হয়তো বাঁচানো যাবে না। তাই আধা পাগল স্বামী, তাদের ছোট্ট দুই সন্তান ও দেবর এবং দেখতে আসা পূর্ণিমার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা পূর্ণিমাকে বাঁচাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চান। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়ালে হয়তো সে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। পূর্ণিমাও তার দুটি সন্তানের জন্য বেঁচে থাকতে চায় এই সুন্দর পৃথিবীতে।‘ আর সন্তানরা চায় তাদের মা সুস্থ থাকুক।

স্বামী ডাবলু প্রামানিক আধা পাগল হওয়ায় দেবর পলাশ প্রামানিক নিজের গ্রামীণ ব্যবসা (একদিন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে খাবার বড়ি বিক্রি না করলে তারও কষ্টে দিন পার করতে হয়) ছেড়ে বৌদিকে নিয়ে করেছে দৌড়াদৌড়ি যেন সুস্থ হয়ে ওঠে।

পলাশ বলেন, বৌদিকে নিয়ে গত ৪মাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছি। নওগাঁ ও বগুড়াসহ একাধিক জায়গায় একাধিক ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কোথাও কোনো কাজ হচ্ছিল না। সব জায়গায় করতে হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা। একেক জায়গায় একেক কথা বলা হয়েছে। কোথায় বলা হয়েছে তেমন সমস্যা নেই। আবার কোথায় বলেছে ওষুধ খেলে ভালো হবে। প্রথমে কেউ সঠিক রোগ ধরতে পারেনি। যার কারণে ফলাফল জিরো (শূন্য)। তাই যা হবার তাই হয়েছে।

পলাশ আরও বলেন, নিজেদের আয় ও ধারদেনা করে এতোদিন কোনোরকমে চিকিৎসার খরচ চালিয়েছি। এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। চিকিৎসার ব্যয়ভার আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। সংসার চালাবো না তার উন্নত চিকিৎসা করবো। ডাক্তার জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসায় হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

দুই শিশু সন্তান প্রীতম ও প্রিয়সী বলেন, মা সারা রাত কান্নাকাটি করে। আমাদের খুব খারাপ লাগে। আমরা চাই আমাদের মা তারাতাড়ি ভালো হয়ে উঠুক।

বগুড়া থেকে পূর্ণিমার বাবা শ্রীমন্ত ও মা মায়া রাণী এসেছেন মেয়েকে দেখতে। তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের মেয়েটার এই পরিস্থিতি দেখে খুব কষ্ট লাগছে। আমরা বাবা-মা হয়ে কিভাবে মেনে নিতে পারি। তাই তার সুস্থ্যতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা আশা করছি।

আধা পাগল স্বামী ডাবলু প্রামানিকের মুখে নেই কোনো কথা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে। তার চোখের ভাষায় বুঝাতে চাইছে পূর্ণিমা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।

আর ব্যাথা সহ্য করতে পারিনা। আমি আর বাঁচবোনা। একরাশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন পুর্ণিমা। খুব ব্যথা ও যন্ত্রনার কারণে বেঁচে থাকা কষ্টকর। আমি সুস্থ হতে না পারলে আমার পরিবার চলবে কি করে? আমার দুটি ছোট সন্তানের কি হবে? দাদা আমার দুই সন্তানকে দেখে রাখবেন।

কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু বলেন, আমার কাছে আবেদন করলে সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।‘

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম কচি বলেন, সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে, তাদের জন্য সেই সুযোগ প্রদান করার চেষ্টা করবো। এছাড়া নানা সময়ে আসা বিভিন্ন সুবিধাও ওদের দেওয়ার চেষ্টা করবো।

উল্লেখ্য, পূর্ণিমা এই প্রতিবেদকের চাচাতো (কাকাতো) ভাইয়ের স্ত্রী। (01719-613224 বিকাশ এ্যাকাউন্ট) এই নাম্বারে পাঠিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। কারণ আপনার পাঠানো সহযোগিতায় একজন বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফিরে পেতে পারে।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১০:১০:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
৯৪ জন দেখেছেন

বাঁচতে চায় গৃহবধু পূর্ণিমা

আমার দুই সন্তানকে দেখে রাখবেন : বুকফাটা আকুতি

আপডেট : ১০:১০:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

ঘড়ির কাটায় রাত ১০টা। ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে, চলছে কান্নাকাটি। দুই পাশে ছোট্র দুই সন্তান। আরও আছে পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশীরা। কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, কেউবা বুকে। আর কেউ কেউ ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখন বাড়িতে এটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে ঘুম নেই কারো চোখে। এমনকি ছোট দুটি সন্তানেরও। শরীরে নানা রোগ নিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন পার করছে পূর্ণিমা নামের এক গ্রহবধু।

পুর্ণিমা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল হিন্দু পাড়া গ্রামের ডাবলু প্রামানিকের স্ত্রী। ৩২ বছরের দুই সন্তানের এই গৃহবধু পূর্ণিমার শরীরে কিডনি, ফুঁসফুঁসসহ লিভারে সমস্যা ধরা পড়েছে। বর্তমানে তার চিকিৎসা ব্যয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। তাই বাড়িতে রেখেই ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধ কিনে খাওয়াচ্ছে (তাও অন্য কারো সহযোগিতায়)। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অসহার পরিবার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। দশ বছরের ছেলে ও ৬বছরের মেয়ে এবং আধা পাগল স্বামীকে নিয়ে কোনমতে চলছিল সংসার। এরমধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরণের রোগ। কখনও নওগাঁ, কখনওবা বগুড়া, আবার কখনও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার আশায় দৌড়াদৌড়ি। হত-দরিদ্র অসহায় পরিবারটির চিকিৎসার ব্যয় বহন করা এ যেন এক স্বপ্নের মতো। তারউপর আবার বিভিন্ন ওষুধসহ পরীক্ষা নিরীক্ষা।

তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করে ইতোমধ্যে পরিবারটি সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছে না। উন্নত চিকিৎসার অভাবে তাকে হয়তো বাঁচানো যাবে না। তাই আধা পাগল স্বামী, তাদের ছোট্ট দুই সন্তান ও দেবর এবং দেখতে আসা পূর্ণিমার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা পূর্ণিমাকে বাঁচাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চান। কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়ালে হয়তো সে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে। পূর্ণিমাও তার দুটি সন্তানের জন্য বেঁচে থাকতে চায় এই সুন্দর পৃথিবীতে।‘ আর সন্তানরা চায় তাদের মা সুস্থ থাকুক।

স্বামী ডাবলু প্রামানিক আধা পাগল হওয়ায় দেবর পলাশ প্রামানিক নিজের গ্রামীণ ব্যবসা (একদিন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে খাবার বড়ি বিক্রি না করলে তারও কষ্টে দিন পার করতে হয়) ছেড়ে বৌদিকে নিয়ে করেছে দৌড়াদৌড়ি যেন সুস্থ হয়ে ওঠে।

পলাশ বলেন, বৌদিকে নিয়ে গত ৪মাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছি। নওগাঁ ও বগুড়াসহ একাধিক জায়গায় একাধিক ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কোথাও কোনো কাজ হচ্ছিল না। সব জায়গায় করতে হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা। একেক জায়গায় একেক কথা বলা হয়েছে। কোথায় বলা হয়েছে তেমন সমস্যা নেই। আবার কোথায় বলেছে ওষুধ খেলে ভালো হবে। প্রথমে কেউ সঠিক রোগ ধরতে পারেনি। যার কারণে ফলাফল জিরো (শূন্য)। তাই যা হবার তাই হয়েছে।

পলাশ আরও বলেন, নিজেদের আয় ও ধারদেনা করে এতোদিন কোনোরকমে চিকিৎসার খরচ চালিয়েছি। এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। চিকিৎসার ব্যয়ভার আর বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। সংসার চালাবো না তার উন্নত চিকিৎসা করবো। ডাক্তার জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসায় হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

দুই শিশু সন্তান প্রীতম ও প্রিয়সী বলেন, মা সারা রাত কান্নাকাটি করে। আমাদের খুব খারাপ লাগে। আমরা চাই আমাদের মা তারাতাড়ি ভালো হয়ে উঠুক।

বগুড়া থেকে পূর্ণিমার বাবা শ্রীমন্ত ও মা মায়া রাণী এসেছেন মেয়েকে দেখতে। তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের মেয়েটার এই পরিস্থিতি দেখে খুব কষ্ট লাগছে। আমরা বাবা-মা হয়ে কিভাবে মেনে নিতে পারি। তাই তার সুস্থ্যতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা আশা করছি।

আধা পাগল স্বামী ডাবলু প্রামানিকের মুখে নেই কোনো কথা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে। তার চোখের ভাষায় বুঝাতে চাইছে পূর্ণিমা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।

আর ব্যাথা সহ্য করতে পারিনা। আমি আর বাঁচবোনা। একরাশ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন পুর্ণিমা। খুব ব্যথা ও যন্ত্রনার কারণে বেঁচে থাকা কষ্টকর। আমি সুস্থ হতে না পারলে আমার পরিবার চলবে কি করে? আমার দুটি ছোট সন্তানের কি হবে? দাদা আমার দুই সন্তানকে দেখে রাখবেন।

কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু বলেন, আমার কাছে আবেদন করলে সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।‘

এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম কচি বলেন, সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে, তাদের জন্য সেই সুযোগ প্রদান করার চেষ্টা করবো। এছাড়া নানা সময়ে আসা বিভিন্ন সুবিধাও ওদের দেওয়ার চেষ্টা করবো।

উল্লেখ্য, পূর্ণিমা এই প্রতিবেদকের চাচাতো (কাকাতো) ভাইয়ের স্ত্রী। (01719-613224 বিকাশ এ্যাকাউন্ট) এই নাম্বারে পাঠিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। কারণ আপনার পাঠানো সহযোগিতায় একজন বেঁচে থাকার স্বপ্ন ফিরে পেতে পারে।

বাখ//আর