০৭:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকাকে বড় বার্তা জেলেনস্কির, বল ঠেললেন ট্রাম্পের কোর্টে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। ওভাল অফিসে ডোনল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের একদিন পরে এমনটাই দাবি করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। লন্ডনে গভীর রাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘দুই পক্ষ প্রস্তুত থাকলে টেবিলে যে চুক্তি রয়েছে তা স্বাক্ষরিত হবে।’ শুধু তাই নয়, তিনি জানান, ট্রাম্প ডাকলে আবার তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতেও যাবেন। এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসের ঘটনার পরে মিত্র দেশগুলির চাপে পড়েছে আমেরিকা। কানাডা এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন সহ ইউরোপের বহু দেশই এই আবহে জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছে। এই আবহে ট্রাম্পের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে ফের শান্তির পথ খোলর চেষ্টা করছেন জেলেনস্কি।

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে ট্রাম্পের আমেরিকা। এরই মাঝে ইউক্রেনের থেকে ‘টাকা ফেরত চেয়েছেন’ ট্রাম্প। জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। এই সবের মাঝেই অবশ্য ইউক্রেনের সঙ্গে বড় চুক্তি করার চেষ্টায় আছে আমেরিকা। জেলেনস্কি এবং ট্রাম্প এই চুক্তিতে সই করার কথা ছিল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিনই হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আর সেই বৈঠকেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এই আবহে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়। এদিকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তাতেও সই করেননি ট্রাম্প ও জেলেনস্কি।

কী আছে এই খনিজ চুক্তিতে?
ইউক্রেনের সঙ্গে মিলে যৌথ ভাবে সেদেশের খনিজ সম্পদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করবে আমেরিকা। সেই প্রকল্প থেকে অর্জিত অর্থ আমেরিকা এবং ইউক্রেনের যৌথ তহবিলে জমা পড়বে। এদিকে এই চুক্তিতে ‘নিরাপত্তা’র ইস্যু উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বলা হচ্ছে, আমেরিকা সেই ইস্যুর প্রতি ‘বদ্ধপরিকর নয়’। এর আগে এই খনিজ চুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেন শর্ত রেখেছিল, নিরাপত্তা ইস্যুতে আমেরিকাকে বদ্ধপরিকর হতে হবে। সোজা ভাষায়, ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে আমেরিকাকে। তবে ট্রাম্প সেই শর্ত মানেননি। তবে এই চুক্তিতে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার ‘আশ্বাস’ দেওয়া হয়েছে আমেরিকার তরফ থেকে। এই আবহে ট্রাম্পের শর্তেই রাজি হয়েছিলেন জেলেনস্কি। তবে উভয় পক্ষের বাদানুবাদের পর সেই চুক্তি আর স্বাক্ষরিত হয়নি।

২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসে কী হয়েছিল?
ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে কড়া কথা শোনান ট্রাম্প। বলেন, ‘আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাকে হয় রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে না হলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন জেলেনস্কি’। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মরছে। যুদ্ধ করার জন্যে সেনা নেই। আপনার হাতে বিকল্প কমছে। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্ত আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। এটা ভালো বিষয় নয়।’

এদিকে জেলেনস্কি পালটা বলেছিলেন, ‘পুতিনের মতো কোনও খুনিকে কোনও ছাড় দেওয়া ঠিক নয়। তাঁর সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা যাবে না।’ এদিকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সও। তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন আপনি।’ জবাবে গলা চড়িয়েই জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি বহুবার আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’ এরপরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করা হয়। হোয়াইট হাউজ থেকে বেরিয়ে যান জেলেনস্কি। পরে বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে অসম্মান করেছেন জেলেনস্কি। যেদিন তিনি শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তিনি আবার হোয়াইট হাউজে ফিরে আসতে পারেন।’

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:১৪:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫
৭২ জন দেখেছেন

আমেরিকাকে বড় বার্তা জেলেনস্কির, বল ঠেললেন ট্রাম্পের কোর্টে

আপডেট : ০২:১৪:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। ওভাল অফিসে ডোনল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের একদিন পরে এমনটাই দাবি করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। লন্ডনে গভীর রাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘দুই পক্ষ প্রস্তুত থাকলে টেবিলে যে চুক্তি রয়েছে তা স্বাক্ষরিত হবে।’ শুধু তাই নয়, তিনি জানান, ট্রাম্প ডাকলে আবার তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতেও যাবেন। এদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসের ঘটনার পরে মিত্র দেশগুলির চাপে পড়েছে আমেরিকা। কানাডা এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন সহ ইউরোপের বহু দেশই এই আবহে জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছে। এই আবহে ট্রাম্পের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে ফের শান্তির পথ খোলর চেষ্টা করছেন জেলেনস্কি।

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে ট্রাম্পের আমেরিকা। এরই মাঝে ইউক্রেনের থেকে ‘টাকা ফেরত চেয়েছেন’ ট্রাম্প। জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। এই সবের মাঝেই অবশ্য ইউক্রেনের সঙ্গে বড় চুক্তি করার চেষ্টায় আছে আমেরিকা। জেলেনস্কি এবং ট্রাম্প এই চুক্তিতে সই করার কথা ছিল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিনই হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আর সেই বৈঠকেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এই আবহে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়। এদিকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তাতেও সই করেননি ট্রাম্প ও জেলেনস্কি।

কী আছে এই খনিজ চুক্তিতে?
ইউক্রেনের সঙ্গে মিলে যৌথ ভাবে সেদেশের খনিজ সম্পদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করবে আমেরিকা। সেই প্রকল্প থেকে অর্জিত অর্থ আমেরিকা এবং ইউক্রেনের যৌথ তহবিলে জমা পড়বে। এদিকে এই চুক্তিতে ‘নিরাপত্তা’র ইস্যু উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বলা হচ্ছে, আমেরিকা সেই ইস্যুর প্রতি ‘বদ্ধপরিকর নয়’। এর আগে এই খনিজ চুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেন শর্ত রেখেছিল, নিরাপত্তা ইস্যুতে আমেরিকাকে বদ্ধপরিকর হতে হবে। সোজা ভাষায়, ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে আমেরিকাকে। তবে ট্রাম্প সেই শর্ত মানেননি। তবে এই চুক্তিতে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার ‘আশ্বাস’ দেওয়া হয়েছে আমেরিকার তরফ থেকে। এই আবহে ট্রাম্পের শর্তেই রাজি হয়েছিলেন জেলেনস্কি। তবে উভয় পক্ষের বাদানুবাদের পর সেই চুক্তি আর স্বাক্ষরিত হয়নি।

২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসে কী হয়েছিল?
ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে কড়া কথা শোনান ট্রাম্প। বলেন, ‘আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনাকে হয় রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে হবে না হলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন জেলেনস্কি’। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মরছে। যুদ্ধ করার জন্যে সেনা নেই। আপনার হাতে বিকল্প কমছে। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্ত আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। এটা ভালো বিষয় নয়।’

এদিকে জেলেনস্কি পালটা বলেছিলেন, ‘পুতিনের মতো কোনও খুনিকে কোনও ছাড় দেওয়া ঠিক নয়। তাঁর সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা যাবে না।’ এদিকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সও। তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, ‘আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন আপনি।’ জবাবে গলা চড়িয়েই জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি বহুবার আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।’ এরপরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করা হয়। হোয়াইট হাউজ থেকে বেরিয়ে যান জেলেনস্কি। পরে বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে অসম্মান করেছেন জেলেনস্কি। যেদিন তিনি শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তিনি আবার হোয়াইট হাউজে ফিরে আসতে পারেন।’