০২:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুষ না পেয়ে সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন : পানির অভাবে কৃষকের জমি ফেটে চৌচির!

আসাদুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কৃষকের কাছে দাবীকৃত উৎকোচের টাকা না পেয়ে ফসলের জমিতে সেচ প্রকল্পের চলমান বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে বিএডিসি কর্মকর্তা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। এদিকে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলে ৩০ বিঘা জমিতে আবাদ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। সেইসাথে কিছু রোপনকৃত জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অপরদিকে ভুক্তভোগী কৃষক শাহজাদপুর বিএডিসি অফিসে বারবার গিয়েও কর্মকর্তার অসহযোগীতার কারনে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দত্তদরতা গ্রামের মোঃ আলতাব হোসেনের ছেলে কৃষক এমদাদুল আলী ২০২১ সালে ৫৭ তম অধিবেশনে ৩০ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো মৌসুমে সেচ প্রদানের জন্য বিএডিসি অফিস থেকে  গভীর নলকূপের লাইসেন্স প্রাপ্ত হন। সেই অনুযায়ী শাহজাদপুর পল্লী বিদ্যুৎ বিধি মোতাবেক সংযোগ প্রদান করে।

একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শাহ আলম নামে ৬০ তম অধিবেশনে একই স্থানে প্রায় ৮০’ ফুট দুরত্বে বিএডিসি উপ প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস হোসেন লাইসেন্স প্রদান করে। এই লাইসেন্স পাওয়ার পরে দুরত্বজনিত কারন দেখিয়ে এমদাদুল আলী একটি অভিযোগ দেন। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩ সালে বিএডিসি শাহ আলমের লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করে সংযোগ না লাগানোর জন্য বাতিলের চিঠি প্রদান করে শাহজাদপুর উপজেলা বিএডিসি উপ প্রকৌশলী ও সেচ কমিটি সেইসাথে মোঃ এমদাদুল আলীর সেচ প্রকল্প ও বিদ্যুৎ সংযোগ বৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ফসলের জমিতে সেচ প্রকল্প চলাবস্থায় চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস হোসেন ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম শামিম খান হঠাৎ বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে চলতি ইরি মৌসুমে চাষাবাদের চরম বিপর্যয়ে পড়েছে ৩০ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো চাষের কৃষক ও সেচ প্রকল্পের লাইসেন্সধারী এমদাদুল আলী।

এ বিষয়ে সেচের অধিনে থাকা কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এই সেচের অধিনে ৪০ শতক জমিতে ধান চাষ করে পরিবারের আহার জোগাতে হয়। এখন হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষক রনজু বলেন, ২ বছর যাবত সেচ প্রকল্পে ৩ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে বার মাসের আহার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ করে সংসার চালাই। সেচ বন্ধ হলে না খেয়ে থাকতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা শামিম খান জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা তবে বিএডিসি অফিসের নির্দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক মোঃ এমদাদুল জানান, বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস ঘুষ নিয়ে শাহ আলম নামের একজনকে মাত্র ১৬ শতাংশ জমিতে সেচের জন্য ৮০ ফুট দূরত্বে একটি লাইসেন্স দেয় যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। পরে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস ক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি ধামকি দেয়। এক পর্যায়ে অভিযোগ তুলে নিয়ে দুই কৃষককে সমন্বয় করতে বলেন অথবা ১ লাখ টাকা দিতে বলেন। এ দুটোর কোন শর্তেই রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষক এমদাদুলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এদিকে বিষয়টি জানতে একাধিকবার অফিসে গেলেও শাহজাদপুর বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াসকে পাওয়া যায়নি। বারবার মুঠোফোনে (01709606226) যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি সরজমিনে তদন্তপূর্বক সংযোগ দিয়ে কৃষকের একমাত্র উপার্জনক্ষম সেচ প্রকল্প চালুর দাবী করেছেন স্থানীয়রা।#

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১২:০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
৮৯ জন দেখেছেন

ঘুষ না পেয়ে সেচ প্রকল্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন : পানির অভাবে কৃষকের জমি ফেটে চৌচির!

আপডেট : ১২:০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কৃষকের কাছে দাবীকৃত উৎকোচের টাকা না পেয়ে ফসলের জমিতে সেচ প্রকল্পের চলমান বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে বিএডিসি কর্মকর্তা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। এদিকে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলে ৩০ বিঘা জমিতে আবাদ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। সেইসাথে কিছু রোপনকৃত জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অপরদিকে ভুক্তভোগী কৃষক শাহজাদপুর বিএডিসি অফিসে বারবার গিয়েও কর্মকর্তার অসহযোগীতার কারনে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দত্তদরতা গ্রামের মোঃ আলতাব হোসেনের ছেলে কৃষক এমদাদুল আলী ২০২১ সালে ৫৭ তম অধিবেশনে ৩০ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো মৌসুমে সেচ প্রদানের জন্য বিএডিসি অফিস থেকে  গভীর নলকূপের লাইসেন্স প্রাপ্ত হন। সেই অনুযায়ী শাহজাদপুর পল্লী বিদ্যুৎ বিধি মোতাবেক সংযোগ প্রদান করে।

একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শাহ আলম নামে ৬০ তম অধিবেশনে একই স্থানে প্রায় ৮০’ ফুট দুরত্বে বিএডিসি উপ প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস হোসেন লাইসেন্স প্রদান করে। এই লাইসেন্স পাওয়ার পরে দুরত্বজনিত কারন দেখিয়ে এমদাদুল আলী একটি অভিযোগ দেন। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩ সালে বিএডিসি শাহ আলমের লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করে সংযোগ না লাগানোর জন্য বাতিলের চিঠি প্রদান করে শাহজাদপুর উপজেলা বিএডিসি উপ প্রকৌশলী ও সেচ কমিটি সেইসাথে মোঃ এমদাদুল আলীর সেচ প্রকল্প ও বিদ্যুৎ সংযোগ বৈধ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ফসলের জমিতে সেচ প্রকল্প চলাবস্থায় চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস হোসেন ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম শামিম খান হঠাৎ বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে চলতি ইরি মৌসুমে চাষাবাদের চরম বিপর্যয়ে পড়েছে ৩০ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো চাষের কৃষক ও সেচ প্রকল্পের লাইসেন্সধারী এমদাদুল আলী।

এ বিষয়ে সেচের অধিনে থাকা কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এই সেচের অধিনে ৪০ শতক জমিতে ধান চাষ করে পরিবারের আহার জোগাতে হয়। এখন হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষক রনজু বলেন, ২ বছর যাবত সেচ প্রকল্পে ৩ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে বার মাসের আহার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ করে সংসার চালাই। সেচ বন্ধ হলে না খেয়ে থাকতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা শামিম খান জানান, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা তবে বিএডিসি অফিসের নির্দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক মোঃ এমদাদুল জানান, বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস ঘুষ নিয়ে শাহ আলম নামের একজনকে মাত্র ১৬ শতাংশ জমিতে সেচের জন্য ৮০ ফুট দূরত্বে একটি লাইসেন্স দেয় যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। পরে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস ক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি ধামকি দেয়। এক পর্যায়ে অভিযোগ তুলে নিয়ে দুই কৃষককে সমন্বয় করতে বলেন অথবা ১ লাখ টাকা দিতে বলেন। এ দুটোর কোন শর্তেই রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষক এমদাদুলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এদিকে বিষয়টি জানতে একাধিকবার অফিসে গেলেও শাহজাদপুর বিএডিসি কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াসকে পাওয়া যায়নি। বারবার মুঠোফোনে (01709606226) যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি সরজমিনে তদন্তপূর্বক সংযোগ দিয়ে কৃষকের একমাত্র উপার্জনক্ষম সেচ প্রকল্প চালুর দাবী করেছেন স্থানীয়রা।#

বাখ//আর