রাজপথ-রাজনীতিতে নারীরা এখনও বৈষম্যের শিকার

বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্র ধরে গণঅভ্যুত্থান। যেখানে সম্মুখসারিতেই ছিলেন নারীরা। অথচ মুক্তি মেলেনি তাদের। রাজপথ কিংবা রাজনীতিতে এখনও বৈষম্যের শিকার নারীরা। পুরাতন তো বটেই নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোতেও নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া ৩৩ শতাংশ নারীদের উপস্থিতি নিশ্চিতের কথা রয়ে গেছে শুধু কাগজে কলমে।
একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে চব্বিশের স্বৈরাচার তাড়ানোর আন্দোলন; নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সমানে সমান। মিছিলে-স্লোগানে উচ্চস্বর যেমন ছিল তেমনই চরম নির্যাতনের মুখে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়তেও সম্মুখভাগে ছিলেন নারীরা।
তবে চব্বিশের বিপ্লবে নারী অংশীজনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল বাস্তবে তার কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে? সর্বস্তরে নারীর নিরাপত্তাই বা কতটুকু নিশ্চিত করা গেছে?
চব্বিশে বদলে দেবার প্রত্যয় থাকলেও আদতে নারীর কপাল বদলায়নি। এই যেমন পলিসি মেকিংয়ে। আন্দোলনের বড় অংশীজন হলেও, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে থাকেন নারীরা। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের হাত ধরে সম্প্রতি নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্থান ঘটলেও, সেখানেও সম্মুখসারিতে নারী নেতৃত্বের সংকট আছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, এই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নারীদেরকে আমরা রাজনীতির মাঠে একদম সক্রিয় ও অগ্রবর্তী ভ্যানগার্ড ভূমিকায় দেখবো। কিন্তু আমরা সেটার থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি। যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা আমরা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি, কিন্তু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দল সেই পুরোনো রাজনৈতিক ধারাকে চর্বিত চর্বণ করে সামনের দিকে নিয়ে এসেছেন। এই কোটা আকারে নারীদের রাখা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল বয়ে আনবে না।’
গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মানেনি কোন দলই। বাঁধা কোথায়? জানতে চাই ছাত্রদলের এই নেত্রীর কাছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, ‘একটা মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা বা রাজনীতি করতে আসার আগে পর্যন্ত তার জীবনে বিভিন্ন ধরণের যে স্ট্রাগল থাকে সেখান থেকে রাজনীতি করতে আসা তার জন্য কিন্তু এক্সট্রা স্ট্রাগল। আমাদের নিয়ে ক্রমাগত ডিসগ্রেসফুল মন্তব্য করা হচ্ছে। এটা রাজনীতিতে না আসার অন্যতম বাধা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তারা নারীদের নিয়ে কাজ করছে। আমরা কাজ করছি। নারী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি আশা রাখি এ সংখ্যাটা বাড়বে।’
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরুষ শাসিত সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটে রাজনীতির মাঠেও তাই নারী নেতৃত্বের সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে উঠেনি বাংলাদেশে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির যে মঞ্চ, সেখারে পুরুষালি যে ধাক্কাধাক্কি এটা বন্ধ করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য খুবই জরুরি। পুরুষালি ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করেন, তাহলে আপনারা দেখবেন ৩৩ শতাংশ কেন দেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশই নারী। জনসংখ্যার অনুপাতে নারীরা পার্টিতে চলে আসবে।’