মুকুলে ছেয়ে গেছে দিনাজপুরের লিচু বাগান, স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা

দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার লিচু গাছগুলোতে ফুলের বাহার। মুকুলের স্নিগ্ধ সুবাসে মৌমাছির দল উড়ে বেড়াচ্ছে বাগানে বাগানে। লিচু চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে। তবে তাদের মনে একটাই শঙ্কা-প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কায় যেন স্বপ্নভঙ্গ না হয়।
মুকুল কম হলেও আশার আলো দেখছেন চাষিরা বিরল উপজেলার মাধববাটি গ্রামের লিচু চাষি আবু তাহের জানান, এবার লিচুর মুকুলের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে গাছের সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, “গত বছর প্রচণ্ড গরমের কারণে লিচু ঝরে গেছে, অনেক লিচু শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। এবারও আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে, তবে আমরা বাগানের যত্ন নিচ্ছি।”
লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ, ঝুঁকিতে ব্যবসায়ীরা লিচু চাষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এ মৌসুম ঘিরে ব্যাপক বিনিয়োগ করেন। স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী হাজী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি ইতোমধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার লিচুর বাগান কিনে রেখেছেন। যদিও মুকুলের পরিমাণ কিছুটা কম, তবুও আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো লাভের আশা করছেন তিনি।
“লিচু ব্যবসায় অনেক ঝুঁকি রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়। তবে আমরা আশা করছি, এবার ফলন ভালো হবে এবং কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।”বলেন হাজী আনোয়ারুল ইসলাম। লিচুর রাজ্যে দিনাজপুর: কী বলছে কৃষি বিভাগ?
দিনাজপুরের বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মস্তফা হাসান ইমাম জানান, জেলাটির ১৩টি ইউনিয়নে বিভিন্ন জাতের লিচু আবাদ হয়। এর মধ্যে বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা, চায়না থ্রি, কাঠালি ও এলাচি লিচু বেশি জনপ্রিয়। কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান জানান, “দিনাজপুরে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়। গাছে গাছে যে পরিমাণ মুকুল দেখা যাচ্ছে, তাতে আমরা বাম্পার ফলনের আশা করছি। কৃষকদের আমরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে তারা লিচু উৎপাদন ও সংরক্ষণে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।”
দিনাজপুরের লিচু: অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিনাজপুরের লিচু চাষ শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। জেলার ১৩টি উপজেলায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়, যার পরিমাণ বছরে প্রায় ৫০-৬০ হাজার মেট্রিক টন। বাজারমূল্যে এর মূল্য ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।
লিচু চাষিদের স্বপ্ন সফল করতে চাই অনুকূল আবহাওয়া এবং সরকারি সহায়তা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কা সামলে উঠতে পারলে, দিনাজপুরের লিচু ব্যবসায়ীরা এবারও ভালো লাভের মুখ দেখবেন বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
বাখ//এস