০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরের হায়দারাবাদে ঘোড়ার মাংস বিক্রি, প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০টাকা

কাজী মকবুল, গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুর মহানগরির হায়দারাবাদে কেজি দরে ঘোড়ার মাংস বিক্রি হচ্ছে এবং তা বেশ সুলভ মূল্যে মিলছে। প্রতি কেজি মাংসের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , চলতি বছরের শুরুতে মহানগরের হায়দারাবাদে দুই বন্ধু শফিকুল ইসলাম ও নুরুল্লাহ মামুন বাণিজ্যিকভাবে ঘোড়ার মাংস বিক্রি শুরু করে। এ মাংস কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহও বেড়েছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম নামে একজন মাংস বিক্রেতা। তিনি জানান, ‘গরুর মাংসে প্রচুর চর্বি থাকলেও ঘোড়ার মাংসে তেমন চর্বি নেই। খেতে সুস্বাদ ও দামও কম। এলাকার মানুষ জানান, প্রথম দিকে সপ্তাহে একদিন দুয়েকটি ঘোড়া জবাই করা হলেও বর্তমানে প্রতি শুক্রবার ১০-১২টি ঘোড়া জবাই করা হচ্ছে। মাংস কিনতে অনেক দূর থেকেও মানুষ আসছেন বলে জানান বিক্রেতারা।

তবে ঘোড়ার মাংস বিক্রি ও খাওয়া নিয়ে ওই এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যারা খাচ্ছেন তারা জানান, ঘোড়ার মাংস খেতে গরুর মাংসের মতই সুস্বাদু। এছাড়া দামও অনেক কম । ফলে আমিষের স্বাদ মেটাতে ক্রেতারা ঝুকছেন।

অপরদিকে ঘোড়ার মাংস আসলেই খাওয়া উচিত কিনা, তা নিয়েও শঙ্কা ও নানা প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। অরুচিকর হিসেবে উল্লেখ করছেন কেউ কেউ । আবার ধর্মীয় বিচার বিশ্লেষণও চলছে নানাভাবে। মুসলিম শরিয়ত মোতাবেক ঘোড়ার মাংস হালাল না হারাম কিংম্বা খাওয়া জায়েজ কিনা তা নিয়েও চলছে নানা তর্ক বিতর্ক।
ঘোড়ার মাংস হালাল না হারাম ?
ততকালীন সময়ে ঘোড়া জিহাদের কাজে ব্যবহার হওয়ায় এর মাংস ভক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে দ্বিমত ছিল। হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত খালিদ ইবনে ওলিদ রা. বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ৮/২০৬; সুনানে আবু দাউদ ২/৫৩১) নিষিদ্ধ হওয়ার মূল সূত্র হচ্ছে এ হাদিস।

তবে সাধারণ সময়ে ঘোড়ার গোশত খেতে কোনো সমস্যা নেই। হযরত জাবের রা. বলেন, খায়বারের যুদ্ধে রসুল সা. গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন, ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন (বুখারি ৫৫২০; মিশকাত ৪১০৭)।

মুফতি আবু সাঈদ সাদী তিনি বলেন ঘোড়া খাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল অনুমতি দিয়েছেন। বুখারী মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসে বর্ণনা দিয়েছেন রাসুল পাক সাঃ ঘোড়ার গোস্ত খেতে বলেছেন গাধার গোশত কে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেন ইসলামে ঘোড়ার গোস্ত  খাওয়া হারাম বলতে পারবেনা কোন মাওলানা মুফতিগন।

অন্য হাদিসে রয়েছে হযরত আসমা রা. বলেন, আমরা রসুল সাঃ-এর যুগে ঘোড়া যবহ করেছি ও গোশত খেয়েছি (বুখারি ৫৫১৯)।
ব্যাপকহারে মানুষ ঘোড়া জবাই করে গোশত খেলে যুদ্ধের সময় ঘোড়া পাওয়া যাবে না। তাই ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন মহানবী সাঃ। যদি এমন কোনো পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে ঘোড়ার গোশত খাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।
পুষ্টিগুণ:
ঘোড়ার মাংসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যশোরে কর্মরত জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদ মুহাম্মদ আরিফ ইকবাল বলেন, ঘোড়ার মাংসে বেশ কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে। উচ্চ প্রোটিন : ঘোড়ার মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা পেশীর বিকাশ এবং মেরামতের জন্য অপরিহার্য।

কম চর্বি : সাধারণত গরুর মাংসের তুলনায় ঘোড়ার মাংসে কম চর্বি থাকে, যা মানুষের শরিরের জন্য উপকারী।
ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ : ঘোড়ার মাংস আয়রন, জিঙ্ক এবং বি ভিটামিনের একটি ভালো উৎস, বিশেষ করে বি১২, যা শক্তি বিপাক এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড : কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অন্যান্য লাল মাংসের তুলনায় ঘোড়ার মাংসে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, যা হৃদরোগের জন্য উপকারী।
স্বাস্থ্যঝুকিঁ কতটুকু:
জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদ মুহাম্মদ আরিফ ইকবাল ঘোড়ার মাংস খবারে কিছু সতর্কতা ও ঝুকিঁর কথাও বলেছেন।
ড্রাগ রেসিডিউ: ঘোড়ার চিকিৎসায় অনেক সময় ব্যবহৃত ওষুধ (যেমন: ফেনিলবুটাজোন) মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব ওষুধের অবশিষ্টাংশ যদি মাংসে থেকে যায়, তবে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্যারাসাইট/ব্যাকটেরিয়া: কাঁচা বা কম রান্না করা ঘোড়ার মাংসে ট্রিচিনেল্লা (Trichinella) নামক পরজীবী থাকতে পারে, যা ট্রিচিনেলোসিস নামক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই মাংস ভালোভাবে রান্না করা জরুরি।
অ্যালার্জি/সংবেদনশীলতা: ঘোড়ার মাংস যারা নতুন খাবেন তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকতে পারে।
খেতে চাইলে সতর্কতা:
জনাব আরিফ যে পরামর্শ দিয়েছেন তা হলো- বিশ্বস্ত উৎস থেকে মাংস কিনতে হবে। ভালোভাবে অর্থাৎ ৭০ ডিগ্রী বা তার বেশি তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে। এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস হলে তার লেবেল চেক করে নিতে হবে। বিশেষ করে কোনো ড্রাগ রেসিডিউ আছে কি না।
গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. হারুনুর রশিদ জানান, হায়দারাবাদে ঘোড়া জবাইয়ের বিষয়টি শুধু শুনেছি। নিয়মানুযায়ী পশু জবাইয়ের আগে সুস্থ কি না, এর জন্য ডাক্তারি সার্টিফিকেট আমাদের কাছ থেকে নিতে হয়। কিন্তু ঘোড়া জবাইয়ের কোনো সার্টিফিকেট আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১১:১৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
৮৬ জন দেখেছেন

গাজীপুরের হায়দারাবাদে ঘোড়ার মাংস বিক্রি, প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০টাকা

আপডেট : ১১:১৬:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

গাজীপুর মহানগরির হায়দারাবাদে কেজি দরে ঘোড়ার মাংস বিক্রি হচ্ছে এবং তা বেশ সুলভ মূল্যে মিলছে। প্রতি কেজি মাংসের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , চলতি বছরের শুরুতে মহানগরের হায়দারাবাদে দুই বন্ধু শফিকুল ইসলাম ও নুরুল্লাহ মামুন বাণিজ্যিকভাবে ঘোড়ার মাংস বিক্রি শুরু করে। এ মাংস কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহও বেড়েছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম নামে একজন মাংস বিক্রেতা। তিনি জানান, ‘গরুর মাংসে প্রচুর চর্বি থাকলেও ঘোড়ার মাংসে তেমন চর্বি নেই। খেতে সুস্বাদ ও দামও কম। এলাকার মানুষ জানান, প্রথম দিকে সপ্তাহে একদিন দুয়েকটি ঘোড়া জবাই করা হলেও বর্তমানে প্রতি শুক্রবার ১০-১২টি ঘোড়া জবাই করা হচ্ছে। মাংস কিনতে অনেক দূর থেকেও মানুষ আসছেন বলে জানান বিক্রেতারা।

তবে ঘোড়ার মাংস বিক্রি ও খাওয়া নিয়ে ওই এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যারা খাচ্ছেন তারা জানান, ঘোড়ার মাংস খেতে গরুর মাংসের মতই সুস্বাদু। এছাড়া দামও অনেক কম । ফলে আমিষের স্বাদ মেটাতে ক্রেতারা ঝুকছেন।

অপরদিকে ঘোড়ার মাংস আসলেই খাওয়া উচিত কিনা, তা নিয়েও শঙ্কা ও নানা প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। অরুচিকর হিসেবে উল্লেখ করছেন কেউ কেউ । আবার ধর্মীয় বিচার বিশ্লেষণও চলছে নানাভাবে। মুসলিম শরিয়ত মোতাবেক ঘোড়ার মাংস হালাল না হারাম কিংম্বা খাওয়া জায়েজ কিনা তা নিয়েও চলছে নানা তর্ক বিতর্ক।
ঘোড়ার মাংস হালাল না হারাম ?
ততকালীন সময়ে ঘোড়া জিহাদের কাজে ব্যবহার হওয়ায় এর মাংস ভক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে দ্বিমত ছিল। হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত খালিদ ইবনে ওলিদ রা. বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ৮/২০৬; সুনানে আবু দাউদ ২/৫৩১) নিষিদ্ধ হওয়ার মূল সূত্র হচ্ছে এ হাদিস।

তবে সাধারণ সময়ে ঘোড়ার গোশত খেতে কোনো সমস্যা নেই। হযরত জাবের রা. বলেন, খায়বারের যুদ্ধে রসুল সা. গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন, ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন (বুখারি ৫৫২০; মিশকাত ৪১০৭)।

মুফতি আবু সাঈদ সাদী তিনি বলেন ঘোড়া খাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল অনুমতি দিয়েছেন। বুখারী মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসে বর্ণনা দিয়েছেন রাসুল পাক সাঃ ঘোড়ার গোস্ত খেতে বলেছেন গাধার গোশত কে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেন ইসলামে ঘোড়ার গোস্ত  খাওয়া হারাম বলতে পারবেনা কোন মাওলানা মুফতিগন।

অন্য হাদিসে রয়েছে হযরত আসমা রা. বলেন, আমরা রসুল সাঃ-এর যুগে ঘোড়া যবহ করেছি ও গোশত খেয়েছি (বুখারি ৫৫১৯)।
ব্যাপকহারে মানুষ ঘোড়া জবাই করে গোশত খেলে যুদ্ধের সময় ঘোড়া পাওয়া যাবে না। তাই ঘোড়ার গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন মহানবী সাঃ। যদি এমন কোনো পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে ঘোড়ার গোশত খাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।
পুষ্টিগুণ:
ঘোড়ার মাংসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যশোরে কর্মরত জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদ মুহাম্মদ আরিফ ইকবাল বলেন, ঘোড়ার মাংসে বেশ কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে। উচ্চ প্রোটিন : ঘোড়ার মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা পেশীর বিকাশ এবং মেরামতের জন্য অপরিহার্য।

কম চর্বি : সাধারণত গরুর মাংসের তুলনায় ঘোড়ার মাংসে কম চর্বি থাকে, যা মানুষের শরিরের জন্য উপকারী।
ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ : ঘোড়ার মাংস আয়রন, জিঙ্ক এবং বি ভিটামিনের একটি ভালো উৎস, বিশেষ করে বি১২, যা শক্তি বিপাক এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড : কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অন্যান্য লাল মাংসের তুলনায় ঘোড়ার মাংসে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, যা হৃদরোগের জন্য উপকারী।
স্বাস্থ্যঝুকিঁ কতটুকু:
জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদ মুহাম্মদ আরিফ ইকবাল ঘোড়ার মাংস খবারে কিছু সতর্কতা ও ঝুকিঁর কথাও বলেছেন।
ড্রাগ রেসিডিউ: ঘোড়ার চিকিৎসায় অনেক সময় ব্যবহৃত ওষুধ (যেমন: ফেনিলবুটাজোন) মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব ওষুধের অবশিষ্টাংশ যদি মাংসে থেকে যায়, তবে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্যারাসাইট/ব্যাকটেরিয়া: কাঁচা বা কম রান্না করা ঘোড়ার মাংসে ট্রিচিনেল্লা (Trichinella) নামক পরজীবী থাকতে পারে, যা ট্রিচিনেলোসিস নামক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই মাংস ভালোভাবে রান্না করা জরুরি।
অ্যালার্জি/সংবেদনশীলতা: ঘোড়ার মাংস যারা নতুন খাবেন তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকতে পারে।
খেতে চাইলে সতর্কতা:
জনাব আরিফ যে পরামর্শ দিয়েছেন তা হলো- বিশ্বস্ত উৎস থেকে মাংস কিনতে হবে। ভালোভাবে অর্থাৎ ৭০ ডিগ্রী বা তার বেশি তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে। এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস হলে তার লেবেল চেক করে নিতে হবে। বিশেষ করে কোনো ড্রাগ রেসিডিউ আছে কি না।
গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. হারুনুর রশিদ জানান, হায়দারাবাদে ঘোড়া জবাইয়ের বিষয়টি শুধু শুনেছি। নিয়মানুযায়ী পশু জবাইয়ের আগে সুস্থ কি না, এর জন্য ডাক্তারি সার্টিফিকেট আমাদের কাছ থেকে নিতে হয়। কিন্তু ঘোড়া জবাইয়ের কোনো সার্টিফিকেট আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি।

বাখ//আর