বিলিনের পথে কিংবদন্তীর নাইকা বেহুলার পৈতিক নিবাস

“ও বেহুলা আমারে নিয়া তুমি ভাসাইয়ো ভেলা“ জনপ্রিয় এ গানটির নাইকা চরিত্র বেহুলা। যিনি ষোড়শ শতাব্দীতে তার সর্প দংশিত স্বামী লক্ষিন্দারকে বাঁচাতে ভেলায় ভাসিয়ে ভদ্রা নদী বেয়ে বগুড়া জেলার মহস্থান গড় থেকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিনসাড়া গ্রামে বাবার বাড়ী এসেছিলেন। সতী-সাবিত্রী স্ত্রীর দৃঢ মনোবল আর অদম্য সাহসীকতা বাঁচিয়েছিল তার স্বামীকে। কিংবদন্তীর নাইকা সেই বেহুলার পৈতিক নিবাস আজ বিলিনের পথে। হারিয়ে যাচ্ছে তার স্মৃতি বিজড়িত জিয়ন্ত ক‚প।
তাড়াশ মহিলা ডিগ্রী কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, সতী-সাবিত্রী নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর বাবা বছুবানিয়া ছিলেন তৎকালীন জমিদার। যার রাজ্য বিচানী নগড় নামে পরিচিত ছিল। এখানে বড় বড় অট্টালিকা, মন্দির ও দালান কোটার স্মৃতি চিহ্ন এখুনও বিদ্যমান।
জমিদার বাছুবানিয়া জল কষ্ঠ দূর করার জন্য খনন করেছিলেন এক বিশাল ক‚প। যা জিয়ন্ত কূপ নামে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে এথুনও রয়েছে। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে ক‚পটি আজ অযতেœ, অবহেলায় পড়ে আছে। কূপটিকে ঘিরে প্রতি দিন শত শত দর্শনার্থীর ঢল নামে। জন শ্রæতি রয়েছে, সে সময় দূরারোগ্র রোগে আক্রান্ত রোগীরা এ ক‚প থেকে বেহুলার নিজ হাতে উঠানো পানি পান করলে নতুন জীবন পেত। তাই এ ক‚পের নাম জীয়ন্ত ক‚প।
বিনসাড়া গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তি চাঁন সরকার জানান, এ গ্রামের প্রাচীন নাম ছিল নিচানীনগর। লখিন্দরের বাড়ি বগুড়ার মহাস্থানগড়ের কাছে চম্পকনগরে বা চাঁদপুের। চাঁদপুরের চাঁদ সওদাগরের ছেলে লখিন্দর। বগুড়ার চম্পকনগরে সেসব স্মৃতিচিহ্ন নেই। তবে বিনসাড়ায় বেহুলার কিছু স্থাপনা এখুনও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। অবশ্য মহাস্থানগড়ের কাছে গোকুল এলাকায় প্রাচীন একটি উঁচু ঢিবি ‘বেহুলার বাসরঘর’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে বহুকাল থেকে। এই ঢিবি কিভাবে বেহুলার বাসরঘরের পরিচিতি পেল তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। তবে ১৯৮০ সালে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর এই ঢিবিটিকে মৌর্য সা¤্রাজ্যের রাজধানী বলে জানান। প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিনসাড়া গ্রামের বেহুলার বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পেছনে রয়েছে বেহুলার কূপ। ক‚পটির ভেতরটা ঝাড় জঙ্গলে ভরে গেলেও বাহিরে কিছুটা পরিষ্কার করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর।
তাড়াশ উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, বেহুলার কূপ নামে পরিচিত ওই স্থানটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। পূর্বেই উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে এর চার দিকে পাকা করন করে ক‚পের উপর গ্রীলের ঢাকনা দেয়া হয়েছে। প্রতি দিন অসংখ্য দর্শক এখানে আসেন। তাই তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এমনটি করা হয়েছে।
বাখ//আর