০৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদাবাজিকে ব্যবসায় রূপ দিয়েছেন পরিবহন খাতের নেতারা

অনলাইন ডেস্ক

সুসজ্জিত অফিস কিংবা বাসায় বসেই পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। আর রাস্তায় চাঁদার টাকা তুলছে বেতনভুক্ত কর্মচারীরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাকে রীতিমতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। আর লাভের টাকা যায় সবার পকেটে তাই হয়তো দেখে শুনেও অভিযোগের অপেক্ষায় কর্তৃপক্ষ।

চাঁদার টাকার জন্য অপেক্ষা। দায়িত্ব সাভার পরিবহনের প্রতিটি গাড়ি সদরঘাট প্রদক্ষিণ করলেই নিতে হবে ২৮০ টাকা। ভুল হলে বেতনের টাকায় গুনতে হবে জরিমানা। পরিবহন থেকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব কে দিয়েছে? টাকা যায় কোথায়?

টাকা না দিলে ঘোরে না গাড়ির চাকা। মামলা হামলা তো আছেই জানালেন পরিবহন চালকরাই। ৫ আগস্টের পর বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্তরাই নাকি দখল নিয়েছেন সদরঘাট বাস টার্মিনাল। পালিয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্তরা।

প্রতিদিন ১৫০-১৭০টি সাভার পরিবহনের গাড়ি থেকে ২৮০ টাকা করে তোলা হয়। অংকের হিসেবে ৪২ হাজার টাকা আয় দিনে। মাসের হিসেবে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় এখান থেকে। বছরের হিসেবে আয় ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

আজমেরি, ভিক্টরসহ মোট ৬টি গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে সদরঘাটে। তা হলে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা শুধু আয় হয় শুধু সদরঘাটের পরিবহন সেক্টর থেকে। টিআইবির হিসেবে দেশের যাত্রী পরিবহন সেক্টর থেকে প্রতি বছর ১ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা ওঠে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজধানীর পরিবহন সেক্টরের চাঁদার টাকার একটি বড় অংশ যেত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হাতে। খন্দকার এনায়েত উল্লাহর হাতে ছিল হাতে ছিল সব নিয়ন্ত্রণ। এখনও সড়কের টাকা যায় একই জায়গায় শুধু পরিবহন এসেছে মানুষের। ক্ষমতার পালা সড়ক পরিবহনের দায়িত্বে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিবিদরা।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এ এস এম খোকন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে আমরা পুরো ঢাকা শহরে যত টার্মিনাল ছিল সমস্ত জায়গায় আমরা চাঁদাবাজি বন্ধ করে দিয়েছি।’

সড়ক পরিবহনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঁদার পরিমাণ আগের থেকে কমেছে।

তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজরা প্রকৃতপক্ষে কোনো সংগঠন বা দলের লোক না। কিন্তু সময়ের সুবিধায় তারা এ জিনিসগুলো ব্যবহার করে। কেউ সংগঠন বা কেউ দলের পরিচয়ে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি এ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা আছি।’

চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে দল মত নির্বিশেষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও শ্রমিক নেতা শিমুল বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘পথে কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে পারবে না। এটা সংশ্লিষ্ট সকলকে বেসরকারি মালিক, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। সব যোগসাজশ ভেঙে দেয়া হবে।’

সড়কের চাঁদার একটি অংশ যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন অভিযোগ থেকে ৫ আগস্টের পরও বের হতে পারেনি পুলিশ। যদিও তারা বলছে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিএমপির মুখপাত্র ‍মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যেখানেই আমরা চাঁদাবাজ পাচ্ছি, সেখানেই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান যোগাযোগ উপদেষ্টা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘যেখানে চাঁদাবাজি হচ্ছে সে তথ্যটা আপনারা জানান। পুলিশের কন্ট্রোল রুমে জানান। বিআরটিএর কন্ট্রোল রুম আছে। যেকোনো জায়গায় জানান। ওখান থেকে যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে আমাদের জানান। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

সম্মিলিত উদ্যোগ না থাকলে পরিবহন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ১২:২১:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
৯৫ জন দেখেছেন

চাঁদাবাজিকে ব্যবসায় রূপ দিয়েছেন পরিবহন খাতের নেতারা

আপডেট : ১২:২১:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

সুসজ্জিত অফিস কিংবা বাসায় বসেই পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। আর রাস্তায় চাঁদার টাকা তুলছে বেতনভুক্ত কর্মচারীরা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাকে রীতিমতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। আর লাভের টাকা যায় সবার পকেটে তাই হয়তো দেখে শুনেও অভিযোগের অপেক্ষায় কর্তৃপক্ষ।

চাঁদার টাকার জন্য অপেক্ষা। দায়িত্ব সাভার পরিবহনের প্রতিটি গাড়ি সদরঘাট প্রদক্ষিণ করলেই নিতে হবে ২৮০ টাকা। ভুল হলে বেতনের টাকায় গুনতে হবে জরিমানা। পরিবহন থেকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব কে দিয়েছে? টাকা যায় কোথায়?

টাকা না দিলে ঘোরে না গাড়ির চাকা। মামলা হামলা তো আছেই জানালেন পরিবহন চালকরাই। ৫ আগস্টের পর বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্তরাই নাকি দখল নিয়েছেন সদরঘাট বাস টার্মিনাল। পালিয়েছে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্তরা।

প্রতিদিন ১৫০-১৭০টি সাভার পরিবহনের গাড়ি থেকে ২৮০ টাকা করে তোলা হয়। অংকের হিসেবে ৪২ হাজার টাকা আয় দিনে। মাসের হিসেবে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় এখান থেকে। বছরের হিসেবে আয় ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

আজমেরি, ভিক্টরসহ মোট ৬টি গাড়ির রুট পারমিট রয়েছে সদরঘাটে। তা হলে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা শুধু আয় হয় শুধু সদরঘাটের পরিবহন সেক্টর থেকে। টিআইবির হিসেবে দেশের যাত্রী পরিবহন সেক্টর থেকে প্রতি বছর ১ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা ওঠে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজধানীর পরিবহন সেক্টরের চাঁদার টাকার একটি বড় অংশ যেত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হাতে। খন্দকার এনায়েত উল্লাহর হাতে ছিল হাতে ছিল সব নিয়ন্ত্রণ। এখনও সড়কের টাকা যায় একই জায়গায় শুধু পরিবহন এসেছে মানুষের। ক্ষমতার পালা সড়ক পরিবহনের দায়িত্বে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিবিদরা।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এ এস এম খোকন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে আমরা পুরো ঢাকা শহরে যত টার্মিনাল ছিল সমস্ত জায়গায় আমরা চাঁদাবাজি বন্ধ করে দিয়েছি।’

সড়ক পরিবহনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, চাঁদার পরিমাণ আগের থেকে কমেছে।

তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজরা প্রকৃতপক্ষে কোনো সংগঠন বা দলের লোক না। কিন্তু সময়ের সুবিধায় তারা এ জিনিসগুলো ব্যবহার করে। কেউ সংগঠন বা কেউ দলের পরিচয়ে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি এ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা আছি।’

চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে দল মত নির্বিশেষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও শ্রমিক নেতা শিমুল বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘পথে কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে পারবে না। এটা সংশ্লিষ্ট সকলকে বেসরকারি মালিক, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। সব যোগসাজশ ভেঙে দেয়া হবে।’

সড়কের চাঁদার একটি অংশ যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন অভিযোগ থেকে ৫ আগস্টের পরও বের হতে পারেনি পুলিশ। যদিও তারা বলছে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডিএমপির মুখপাত্র ‍মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যেখানেই আমরা চাঁদাবাজ পাচ্ছি, সেখানেই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান যোগাযোগ উপদেষ্টা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘যেখানে চাঁদাবাজি হচ্ছে সে তথ্যটা আপনারা জানান। পুলিশের কন্ট্রোল রুমে জানান। বিআরটিএর কন্ট্রোল রুম আছে। যেকোনো জায়গায় জানান। ওখান থেকে যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে আমাদের জানান। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

সম্মিলিত উদ্যোগ না থাকলে পরিবহন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।