০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান নেতানিয়াহু’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পুতিনের কাছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উপায় ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান নেতানিয়াহু। তবে ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ শেষ করার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্পের সামনে প্রতিশ্রুতি রক্ষাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি সংকট উত্তরণে অবদান রাখতে না পারলে ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এমনটাও আশঙ্কা অনেকের।

মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান এই নেতার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পেরিয়ে গেছে ১৪শ’ ঘণ্টা। যদিও এখনেও শান্তি ফেরেনি ইউক্রেনে। উল্টো ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে যোগ হয়েছে তিক্ততা।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের একদিন আগে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। শুরু হয় জিম্মি ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া। যদিও দুইমাস যেতে না যেতেই আবারও উপত্যকায় আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরাইল। এতে ম্লান হয়ে গেলো ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কৃতিত্ব।

ওয়াশিংটন যেমনটা চেয়েছিলো, সেই পূর্ণাঙ্গ কিংবা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আশপাশ দিয়েও হাঁটছে না মস্কো। শুধু ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। মন্দের ভালো হিসেবে শান্তি আলোচনা এগিয়েছে বলার সুযোগ পেলেন ট্রাম্প। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিস নাকি ক্রেমলিনের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কারণ ট্রাম্পের কল্যাণেই বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে আবারও প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পেলেন পুতিন।

হোয়াইট হাউজের সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক নায়েরা হক বলেন, ‘আপনি যেকোনো দেশকে দখল করে শাস্তি থেকে বাঁচবেন। পাশাপাশি হামলা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাবেন। ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ এই বিষয়টিই প্রমাণ করলো।’

গাজায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তার জন্য জিম্মিদের ব্যবহার করছিলো হামাস। যদিও, অনেকেই মনে করেন, বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মাথায় কখনো শান্তির চিন্তাই ছিল না। তাই জিম্মিদের বিষয়টিকে অযুহাত হিসেবে ব্যবহার করে উপত্যকায় আবারও পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করলো ইসরাইল। তবে এর পেছনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার দুরভিসন্ধি রয়েছে বলেও মত অনেকের। যুদ্ধ শুরু করায় সাময়িকভাবে বন্ধ হলো নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলার শুনানি। অন্যদিকে মন্ত্রিসভায় কট্টরপন্থিরা ফিরে আসায় টিকে গেলো জোট সরকার।

যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ অলিভার ম্যাকটার্নার বলেন, ‘মার্চের শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। কারণ বাজেট পাস করার জন্য তার সরকার টিকিয়ে রাখা দরকার। সামরিক অভিযান শুরুর কারণে বেন গাভির মন্ত্রিসভায় ফিরে এসেছেন। ফলে বাজেট পাস হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেলো।’

পুতিনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মাধ্যম। অন্যদিকে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান নেতানিয়াহু। তবে শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে নিজের গুণগান গাওয়া ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দুটি যুদ্ধ দাগ লাগিয়ে দিয়েছে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের কপালে পিসমেকার থেকে ট্রাবলমেকারের তকমা জোটা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০২:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
৭০ জন দেখেছেন

‘ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান নেতানিয়াহু’

আপডেট : ০২:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

পুতিনের কাছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার উপায় ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান নেতানিয়াহু। তবে ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ শেষ করার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্পের সামনে প্রতিশ্রুতি রক্ষাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি সংকট উত্তরণে অবদান রাখতে না পারলে ইমেজ সংকটে পড়তে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এমনটাও আশঙ্কা অনেকের।

মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান এই নেতার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পেরিয়ে গেছে ১৪শ’ ঘণ্টা। যদিও এখনেও শান্তি ফেরেনি ইউক্রেনে। উল্টো ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে যোগ হয়েছে তিক্ততা।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের একদিন আগে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। শুরু হয় জিম্মি ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া। যদিও দুইমাস যেতে না যেতেই আবারও উপত্যকায় আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরাইল। এতে ম্লান হয়ে গেলো ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কৃতিত্ব।

ওয়াশিংটন যেমনটা চেয়েছিলো, সেই পূর্ণাঙ্গ কিংবা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আশপাশ দিয়েও হাঁটছে না মস্কো। শুধু ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। মন্দের ভালো হিসেবে শান্তি আলোচনা এগিয়েছে বলার সুযোগ পেলেন ট্রাম্প। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিস নাকি ক্রেমলিনের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কারণ ট্রাম্পের কল্যাণেই বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে আবারও প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পেলেন পুতিন।

হোয়াইট হাউজের সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক নায়েরা হক বলেন, ‘আপনি যেকোনো দেশকে দখল করে শাস্তি থেকে বাঁচবেন। পাশাপাশি হামলা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাবেন। ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ এই বিষয়টিই প্রমাণ করলো।’

গাজায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তির নিশ্চয়তার জন্য জিম্মিদের ব্যবহার করছিলো হামাস। যদিও, অনেকেই মনে করেন, বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মাথায় কখনো শান্তির চিন্তাই ছিল না। তাই জিম্মিদের বিষয়টিকে অযুহাত হিসেবে ব্যবহার করে উপত্যকায় আবারও পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করলো ইসরাইল। তবে এর পেছনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার দুরভিসন্ধি রয়েছে বলেও মত অনেকের। যুদ্ধ শুরু করায় সাময়িকভাবে বন্ধ হলো নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলার শুনানি। অন্যদিকে মন্ত্রিসভায় কট্টরপন্থিরা ফিরে আসায় টিকে গেলো জোট সরকার।

যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ অলিভার ম্যাকটার্নার বলেন, ‘মার্চের শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান। কারণ বাজেট পাস করার জন্য তার সরকার টিকিয়ে রাখা দরকার। সামরিক অভিযান শুরুর কারণে বেন গাভির মন্ত্রিসভায় ফিরে এসেছেন। ফলে বাজেট পাস হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেলো।’

পুতিনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মাধ্যম। অন্যদিকে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান নেতানিয়াহু। তবে শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে নিজের গুণগান গাওয়া ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দুটি যুদ্ধ দাগ লাগিয়ে দিয়েছে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের কপালে পিসমেকার থেকে ট্রাবলমেকারের তকমা জোটা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।