০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসা ভিসা ব্যতীত অন্য সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত রাখায় রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন

মোঃ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী

শিক্ষার্থী-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ভিসা ব্যতীত অন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত রেখেছে ভারত। সেই চিকিৎসা ভিসা প্রদানও কমে এসেছে নাটকীয়ভাবে।

ফলে চিকিৎসকদের নির্দেশমত রোগিরা ভারতে যেতে না পারায় গোদাগাড়ী উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের জটিল রোগিরা মহাবিপদে পড়েছেন। অনেকে বিকল্প হিসেবে পথ হিসেবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড-চীনের দিকে ছুটছেন। গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকা বসবাসকারী, রাজশাহী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ( ভারপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির বিশিষ্ট কেন্ত্রীয় নেতা মোঃ শাহাদুল হক তার স্ত্রী ও মেয়ে শাহিনুর খাতুন নিয়ে ভারতের কলিকাতা, ব্যাঙ্গারুলু থেকে জটিল রোগের চিকিৎসা নিয়ে এসেছে। এখন তারা সবাই ভাল আছেন, শাহাদুল হক জানান, ৫ বার মাইনোর ষ্টোক করেছি, আল্লাহ আমাকে ভাল রেখেছেন, পায়ের সমস্যা ছিল সে ভারতের কলিকাতা, ব্যাঙ্গারুলু, চেন্নাই এ চিকিৎসা নিয়ে ভাল আছি। কিন্তু এখন আবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া দরকার কিন্তু ভিসা পাচ্ছি না।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী গ্রামের প্রকৌশলী মোঃ আইন্যাল হক রাজশাহী ও রাজধানী শহর ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু তেমন উপকার পাননি ভারতে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন এখন আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। তার বোন ও বোনের জামাই ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন এখন ভাল আছেন। আবার যেতে হবে কিন্তু ভিসা পাচ্ছেন না বলে জানান।
গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সেলীম রেজা বলেন, হার্টের সমস্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোন উপকার পান নি, আমার স্ত্রী লাইলা দীর্ঘ দিন পটির পীড়ার ভুগছিলেন এখানে বিভিন্ন চিকিৎসের পরামার্শ নিয়ে কোন সুফল পাননি তাই বাধ্য হয়ে এবছর জানুয়ায়ী মাসের ০১/০১/২৩ থেকে ০৯/০/২৩ ইং তারিখ ভারতে স্বামী স্ত্রী চিকিৎসা নিয়ে এসেছি এখন আল্লাহুর অশেষ কৃপায় ভাল আছি। কিন্তু আবার যেতে হত কিন্তু ভিসা জটিলতায় যেতে পারচ্ছি না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলিনগর এলাকার মোসাঃ নায়েমা খাতুন, তিনি রাজশাহীর ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবা নিয়ে কোন উপকার হচ্ছে না। নাক, গলার ডাক্তার সুব্রত কুমার সরকার তিন বছর ধরে চিকিৎসা নিয়ে কোন উপকার পান নি তিনি অপারেশন করার জন্য ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন, কিন্তু অপারেশন না করে ভারতে চিকিৎসা করে এসেছেন। মা গুলবোদন মাজা ব্যথা, পেটে ব্যথা নিয়ে দীর্ঘদিন রাজশাহীতে চিকিৎসা নিয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন, ভারতের ব্যাঙ্গারুলু থেকে চিকিৎসা নিয়ে খুব ভাল আছে। তারা ভিসাও নিয়ে ভারতের বেঙ্গালেরুতে চিকিৎসা নিয়ে নাইমা খাতুনকে ডাক্তার বলেন, অপারেশন করা লাগবে না। ঔষিধ খেয়ে ভাল আছেন, মা ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন ভাল আছেন। তার খালাতো ভাই নূর সুলতান বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে চিকিৎসা করেছেন কিন্তু কোন লাভ হয় নি তিনি ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন সুফল পেয়েছেন। কিন্তু তাদের আবার যেতে হবে ভিসা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না। আবারও ভারতে চিকিৎসা নিতে ভারতে যেতে চান ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনও পান নি। ভিসা পেলে ভারতে যাবেন।

কোমরের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন মাজেদুর রহমান। পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছী গ্রামে বাড়ি তাঁর। রাজশাহীর বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর জন্য কয়দিন আগে পাসপোর্ট করতে আবেদন করেছেন। জরুরী পাসপোর্টটি পেলেই ভিসার জন্য আবেদন করবেন মাজেদুর। মাজেদুর বলেন, ‘আমি আর রাজশাহীর চিকিৎসকদের ওপর ভরসা পাচ্ছি ন্যা। মাজেদুর রহমান যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। এভাবে কতদিন বাঁচপো। সবাই বুইলছে ভারত গেলে আমি ভালো হয়ে যাবো। তাই পাসর্পোটের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু ভিসা বন্ধ থাকায় আর আবেদন করতে পারছি না।

শুধু মাজেদুর রহমানই নন, জটিল রোগ নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসাসবোয় এমন আস্থাহীনতায় ভুগছেন রাজশাহী, চাঁপানবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জসহ এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। আর এসব মানুষের যাদের এতোটুকু সামার্থ আছে, তাঁরাই ছুটছেন ভারতে। ভারতের ব্যাঙ্গালর, চেন্নাই, কলাকতা, ভেলোরের হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন তাঁরা। কিন্তু এখন ভিসা থাকায় তারা যেতে পারছেন না।

অনুসন্ধান ও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস সূত্র জানা গেছে, কেবল গত ৬ মাসেই রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের দপ্তরে মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার। আর ট্যূরিস্ট (ভ্রমণ) ভিসা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। সেই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার হাজার চিকিৎসা ভিসা এবং সাড়ে ৮ হাজার ভ্রমণ ভিসার আবেদন জমা পড়ছে রাজশাহীস্থ ভারতীয় সড়কে অতিরিক্ত কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে যান রোগীরা। ভারতে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, চিকিৎসা খরচসহ অনেকেই কেনাকেটা করেও দেশে ফেরেন। ফলে গড়ে একেকটি রোগীর পেছনে গড়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হলেও প্রতি মাসে শত কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে। আর বছরে সেটি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১২শ কোটি টাকায়। এর বাইরে অনেকেই ভারতের কিছুই চেনেন না বলে দেশ থেকেই গাইড (সহযোগী) নিয়ে যান। তাঁদের পেছনেও মোটা টাকা ব্যয় করতে হয় ওই রোগী বার তাঁর অভিভাবককে।

রাজশাহীর সাংবাদিক বদরুল হাসান লিটন বলেন, ‘আমার বুকের ব্যাথার জন্য রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। চিকিৎসকরা অনেকগুলো ওষুধ দিয়েছিল। মাঝে কিছুদিন ভালো ছিলাম। পরে আবারো সমস্যা দেখা দেয়। এর পর আর আস্থা না পেয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালরে চিকিৎসা করাচ্ছি। দ্বিতীয় বারের মতো ফলোআপ চিকিৎসা করে এসেছি, ভাল আছি। আমার স্ত্রীর চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁকেও ভারতে চিকিৎসা নিয়ে এসেছি।’ আবার যাওয়া দরকার কিন্তু ভিসা পাচ্ছিনা।

আল মামুন মবিন নামের আরেকজন বলেন, আমার স্ত্রীর পায়ের গড়ালির সমস্যা। রাজশাহীতে অনেক চিকিৎসা করেয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু এখানে অপারেশন করাতে সাহস পাচ্ছি না। তাই ভারতীয় ভিসা নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে এসেছি। ভাল আছি কিন্তু যেতে পারছিনা।

এদিকে রাজশাহী অঞ্চল থেকে যেন সহজেই রোগীরা ভারতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসতে পারেন, তার জন্য ভিসাও সহজীকরণ করেছেন বর্তমান ভারতীয় সহকারী কমিশনার মনোজ কুমার। তিনি রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকেই গত দুই মাসেই মাত্র তিন দিনের মাথায় চিকিৎসা ভিসা ছাড় করার ব্যবস্থা করছেন। এতে করে ক্যান্সার, কিডনীসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা দ্রুত ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই।

গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের গৃহবধু মোসাঃ জোহরুন নেসা ও ছোট ছেলে আজিজ আরিফিন ২০২৩ ইং সালের ১৭ জুলাই ভারতের ব্যাঙ্গারুলুর নারায়ন মজুমদার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন খুবই ভাল আছেন। জেহরুন নেসা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন ডাক্তারের নিকট হতে চিকিৎসার নিয়ে কোন উপকার পায় নি। কিডনিজনিত ও স্ত্রী রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে কোন দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোন উপকার হয় নি। তিনি জানান, ভারতের ব্যাঙ্গারুলু থেকে চিকিৎসা নিয়ে খুব উপকার হয়েছে। আমার ছেলে জীমের রাজশাহীর ডাক্তারদের নিকট চিকিৎসা কোন উপকার হয় নি ডাক্তারগণ বলেছিলেন আপনার ছেলের মেরুদণ্ড সমস্যা অপারেন্স করতে হবে। ভারতে গিয়ে চিকিৎসকগন জানান, মেরুদন্ডের কোন সমস্যা নেই, পায়ের একটু সমস্যা আছে, ঔষুধ তেমন দেন নি, তবে শরীরচর্চার জন্য কিছু টিপস দিয়েছে। খুব ভালই ছিল একবছর পর আবার যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন চিকিৎসকগণ কিন্ত ভিসা বন্ধ থাকায় সেটা হচ্ছে না। খুব বিপদে আছি।

রাজশাহী অঞ্চলে চিকিৎসায় রোগীদের আস্থাহীনতার বিষয়টি স্বীকার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক নওসাদ আলী বলেন, ‘রাজশাহী হাসপাতালটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। সেই থেকে এখনো পুরনো জনবল কাঠামোসহ সেই ধাচেই চিকিৎসা ব্যবস্থা চলে আসছে। রাজশাহীতে সরকারি-বেসরকারী কোনো পর্যায়েই আধুনিক চিকিৎসাসেবার মান তেমন বৃদ্ধি হয়নি। আধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি থাকার কথা, সেগুলোর তেমন কিছুই নাই। ফলে ফলে চিকিৎসাসেবায় আধুনিকায়ন করা গেলে ভারতে যে পরিমাণ রোগী যাচ্ছেন, তাঁরা আর যাবেন না।’

তিনি আরও বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অধিকাংশ রোগীই ভারতে চিকিৎসা নিতে যান ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা নিয়ে। এই দুটি চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে তেমন কোনো উন্নত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এমনকি এখন যে হারে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই রোগের চিকিৎসার জন্য রেডিও থেরাপিরও সু ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি রাজশাহীতে। ফলে এই দুটি রোগে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই ছুটছেন ভারতে। আবার অনেক বিত্তশালীরা ছোট ছোট রোগের চিকিৎসা করাতেও যাচ্ছেন। যার কারণে ভারতীয় মেডিক্যাল ভিসার চাপ বাড়ছে।’

সূত্রমতে, ২০২৩ সালে মোট ২০ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত। এই ভিসার একটি বড় অংশই চিকিৎসা ভিসা। সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে প্রতি কার্যদিবসে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার বাংলাদেশিকে চিকিৎসা ভিসা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে প্রত্যেক কার্যদিবসে ভিসা দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে। অর্থাৎ চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান এক পঞ্চমাংশেরও বেশি হ্রাস করেছে ভারত।

ফলে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীরা মহা বিপদে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেকে চিকিৎসার জন্য ঝুঁকছেন থাইল্যান্ড-চীনের দিকে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা নিতে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইউনানে গিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গিয়েছেনও।

বাংলাদেশের এক কূটনীতিক এ তথ্যে সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, “যখন কোথাও শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অন্যকিছু দিয়ে তা পূরণ হয়। মানুষ প্রতিনিয়ত বিকল্প খোঁজে।”

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখাপাত্র জানিয়েছেন, অতি সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে লোকজন আসছেন এবং চীন এই ব্যাপারটিকে দুই দেশের পারস্করিক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির একটি চিত্র হিসেবে দেখতে আগ্রহী। “বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। সে সবেরই একটি অংশ এই চিকিৎসা। ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয় যে আমরা তৃতীয় কোনো দেশকে চাপে রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করছি; এমন কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আমাদের নেই; বরং এ ব্যাপারটিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যটনের একটি নতুন খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন দু’টি বাস্তব কারণে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ভিসা প্রদান কমিয়ে দিয়েছে দেশটি। প্রথমটি হলো বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসে লোকবলের অভাব। ওই কর্মকর্তা জানান, আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তা নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতে ফিরে এসেছেন। তাদের শূন্যস্থান এখনও পূরণ হয়নি।

আর দ্বিতীয় কারণ হলো, অনেক বাংলাদেশিই ভারতে প্রবেশের জন্য চিকিৎসা ভিসার অপব্যবহার করছেন। এই অপব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সংশ্লিষ্ট এবং এদের সবার বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

“বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ধীরে ধীরে ভিসা প্রদানের ব্যাপারটি স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি,” বলেছেন ওই কর্মকর্তা।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৪:৪২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
৭২ জন দেখেছেন

চিকিৎসা ভিসা ব্যতীত অন্য সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত রাখায় রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন

আপডেট : ০৪:৪২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

শিক্ষার্থী-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ভিসা ব্যতীত অন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত রেখেছে ভারত। সেই চিকিৎসা ভিসা প্রদানও কমে এসেছে নাটকীয়ভাবে।

ফলে চিকিৎসকদের নির্দেশমত রোগিরা ভারতে যেতে না পারায় গোদাগাড়ী উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের জটিল রোগিরা মহাবিপদে পড়েছেন। অনেকে বিকল্প হিসেবে পথ হিসেবে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড-চীনের দিকে ছুটছেন। গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকা বসবাসকারী, রাজশাহী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ( ভারপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির বিশিষ্ট কেন্ত্রীয় নেতা মোঃ শাহাদুল হক তার স্ত্রী ও মেয়ে শাহিনুর খাতুন নিয়ে ভারতের কলিকাতা, ব্যাঙ্গারুলু থেকে জটিল রোগের চিকিৎসা নিয়ে এসেছে। এখন তারা সবাই ভাল আছেন, শাহাদুল হক জানান, ৫ বার মাইনোর ষ্টোক করেছি, আল্লাহ আমাকে ভাল রেখেছেন, পায়ের সমস্যা ছিল সে ভারতের কলিকাতা, ব্যাঙ্গারুলু, চেন্নাই এ চিকিৎসা নিয়ে ভাল আছি। কিন্তু এখন আবার চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া দরকার কিন্তু ভিসা পাচ্ছি না।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী গ্রামের প্রকৌশলী মোঃ আইন্যাল হক রাজশাহী ও রাজধানী শহর ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু তেমন উপকার পাননি ভারতে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন এখন আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। তার বোন ও বোনের জামাই ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন এখন ভাল আছেন। আবার যেতে হবে কিন্তু ভিসা পাচ্ছেন না বলে জানান।
গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সেলীম রেজা বলেন, হার্টের সমস্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোন উপকার পান নি, আমার স্ত্রী লাইলা দীর্ঘ দিন পটির পীড়ার ভুগছিলেন এখানে বিভিন্ন চিকিৎসের পরামার্শ নিয়ে কোন সুফল পাননি তাই বাধ্য হয়ে এবছর জানুয়ায়ী মাসের ০১/০১/২৩ থেকে ০৯/০/২৩ ইং তারিখ ভারতে স্বামী স্ত্রী চিকিৎসা নিয়ে এসেছি এখন আল্লাহুর অশেষ কৃপায় ভাল আছি। কিন্তু আবার যেতে হত কিন্তু ভিসা জটিলতায় যেতে পারচ্ছি না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলিনগর এলাকার মোসাঃ নায়েমা খাতুন, তিনি রাজশাহীর ও চাঁপাই নবাবগঞ্জের বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবা নিয়ে কোন উপকার হচ্ছে না। নাক, গলার ডাক্তার সুব্রত কুমার সরকার তিন বছর ধরে চিকিৎসা নিয়ে কোন উপকার পান নি তিনি অপারেশন করার জন্য ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন, কিন্তু অপারেশন না করে ভারতে চিকিৎসা করে এসেছেন। মা গুলবোদন মাজা ব্যথা, পেটে ব্যথা নিয়ে দীর্ঘদিন রাজশাহীতে চিকিৎসা নিয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন, ভারতের ব্যাঙ্গারুলু থেকে চিকিৎসা নিয়ে খুব ভাল আছে। তারা ভিসাও নিয়ে ভারতের বেঙ্গালেরুতে চিকিৎসা নিয়ে নাইমা খাতুনকে ডাক্তার বলেন, অপারেশন করা লাগবে না। ঔষিধ খেয়ে ভাল আছেন, মা ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন ভাল আছেন। তার খালাতো ভাই নূর সুলতান বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে চিকিৎসা করেছেন কিন্তু কোন লাভ হয় নি তিনি ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন সুফল পেয়েছেন। কিন্তু তাদের আবার যেতে হবে ভিসা বন্ধ থাকায় যেতে পারছেন না। আবারও ভারতে চিকিৎসা নিতে ভারতে যেতে চান ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনও পান নি। ভিসা পেলে ভারতে যাবেন।

কোমরের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন মাজেদুর রহমান। পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছী গ্রামে বাড়ি তাঁর। রাজশাহীর বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর জন্য কয়দিন আগে পাসপোর্ট করতে আবেদন করেছেন। জরুরী পাসপোর্টটি পেলেই ভিসার জন্য আবেদন করবেন মাজেদুর। মাজেদুর বলেন, ‘আমি আর রাজশাহীর চিকিৎসকদের ওপর ভরসা পাচ্ছি ন্যা। মাজেদুর রহমান যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। এভাবে কতদিন বাঁচপো। সবাই বুইলছে ভারত গেলে আমি ভালো হয়ে যাবো। তাই পাসর্পোটের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু ভিসা বন্ধ থাকায় আর আবেদন করতে পারছি না।

শুধু মাজেদুর রহমানই নন, জটিল রোগ নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসাসবোয় এমন আস্থাহীনতায় ভুগছেন রাজশাহী, চাঁপানবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জসহ এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। আর এসব মানুষের যাদের এতোটুকু সামার্থ আছে, তাঁরাই ছুটছেন ভারতে। ভারতের ব্যাঙ্গালর, চেন্নাই, কলাকতা, ভেলোরের হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন তাঁরা। কিন্তু এখন ভিসা থাকায় তারা যেতে পারছেন না।

অনুসন্ধান ও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস সূত্র জানা গেছে, কেবল গত ৬ মাসেই রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের দপ্তরে মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার। আর ট্যূরিস্ট (ভ্রমণ) ভিসা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। সেই হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার হাজার চিকিৎসা ভিসা এবং সাড়ে ৮ হাজার ভ্রমণ ভিসার আবেদন জমা পড়ছে রাজশাহীস্থ ভারতীয় সড়কে অতিরিক্ত কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে যান রোগীরা। ভারতে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, চিকিৎসা খরচসহ অনেকেই কেনাকেটা করেও দেশে ফেরেন। ফলে গড়ে একেকটি রোগীর পেছনে গড়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হলেও প্রতি মাসে শত কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে। আর বছরে সেটি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১২শ কোটি টাকায়। এর বাইরে অনেকেই ভারতের কিছুই চেনেন না বলে দেশ থেকেই গাইড (সহযোগী) নিয়ে যান। তাঁদের পেছনেও মোটা টাকা ব্যয় করতে হয় ওই রোগী বার তাঁর অভিভাবককে।

রাজশাহীর সাংবাদিক বদরুল হাসান লিটন বলেন, ‘আমার বুকের ব্যাথার জন্য রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। চিকিৎসকরা অনেকগুলো ওষুধ দিয়েছিল। মাঝে কিছুদিন ভালো ছিলাম। পরে আবারো সমস্যা দেখা দেয়। এর পর আর আস্থা না পেয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালরে চিকিৎসা করাচ্ছি। দ্বিতীয় বারের মতো ফলোআপ চিকিৎসা করে এসেছি, ভাল আছি। আমার স্ত্রীর চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁকেও ভারতে চিকিৎসা নিয়ে এসেছি।’ আবার যাওয়া দরকার কিন্তু ভিসা পাচ্ছিনা।

আল মামুন মবিন নামের আরেকজন বলেন, আমার স্ত্রীর পায়ের গড়ালির সমস্যা। রাজশাহীতে অনেক চিকিৎসা করেয়েছি। কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু এখানে অপারেশন করাতে সাহস পাচ্ছি না। তাই ভারতীয় ভিসা নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে এসেছি। ভাল আছি কিন্তু যেতে পারছিনা।

এদিকে রাজশাহী অঞ্চল থেকে যেন সহজেই রোগীরা ভারতে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসতে পারেন, তার জন্য ভিসাও সহজীকরণ করেছেন বর্তমান ভারতীয় সহকারী কমিশনার মনোজ কুমার। তিনি রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকেই গত দুই মাসেই মাত্র তিন দিনের মাথায় চিকিৎসা ভিসা ছাড় করার ব্যবস্থা করছেন। এতে করে ক্যান্সার, কিডনীসহ জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা দ্রুত ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই।

গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের গৃহবধু মোসাঃ জোহরুন নেসা ও ছোট ছেলে আজিজ আরিফিন ২০২৩ ইং সালের ১৭ জুলাই ভারতের ব্যাঙ্গারুলুর নারায়ন মজুমদার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন খুবই ভাল আছেন। জেহরুন নেসা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন ডাক্তারের নিকট হতে চিকিৎসার নিয়ে কোন উপকার পায় নি। কিডনিজনিত ও স্ত্রী রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে কোন দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে তেমন কোন উপকার হয় নি। তিনি জানান, ভারতের ব্যাঙ্গারুলু থেকে চিকিৎসা নিয়ে খুব উপকার হয়েছে। আমার ছেলে জীমের রাজশাহীর ডাক্তারদের নিকট চিকিৎসা কোন উপকার হয় নি ডাক্তারগণ বলেছিলেন আপনার ছেলের মেরুদণ্ড সমস্যা অপারেন্স করতে হবে। ভারতে গিয়ে চিকিৎসকগন জানান, মেরুদন্ডের কোন সমস্যা নেই, পায়ের একটু সমস্যা আছে, ঔষুধ তেমন দেন নি, তবে শরীরচর্চার জন্য কিছু টিপস দিয়েছে। খুব ভালই ছিল একবছর পর আবার যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন চিকিৎসকগণ কিন্ত ভিসা বন্ধ থাকায় সেটা হচ্ছে না। খুব বিপদে আছি।

রাজশাহী অঞ্চলে চিকিৎসায় রোগীদের আস্থাহীনতার বিষয়টি স্বীকার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক নওসাদ আলী বলেন, ‘রাজশাহী হাসপাতালটি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। সেই থেকে এখনো পুরনো জনবল কাঠামোসহ সেই ধাচেই চিকিৎসা ব্যবস্থা চলে আসছে। রাজশাহীতে সরকারি-বেসরকারী কোনো পর্যায়েই আধুনিক চিকিৎসাসেবার মান তেমন বৃদ্ধি হয়নি। আধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি থাকার কথা, সেগুলোর তেমন কিছুই নাই। ফলে ফলে চিকিৎসাসেবায় আধুনিকায়ন করা গেলে ভারতে যে পরিমাণ রোগী যাচ্ছেন, তাঁরা আর যাবেন না।’

তিনি আরও বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অধিকাংশ রোগীই ভারতে চিকিৎসা নিতে যান ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা নিয়ে। এই দুটি চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে তেমন কোনো উন্নত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এমনকি এখন যে হারে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই রোগের চিকিৎসার জন্য রেডিও থেরাপিরও সু ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি রাজশাহীতে। ফলে এই দুটি রোগে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই ছুটছেন ভারতে। আবার অনেক বিত্তশালীরা ছোট ছোট রোগের চিকিৎসা করাতেও যাচ্ছেন। যার কারণে ভারতীয় মেডিক্যাল ভিসার চাপ বাড়ছে।’

সূত্রমতে, ২০২৩ সালে মোট ২০ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে ভারত। এই ভিসার একটি বড় অংশই চিকিৎসা ভিসা। সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে প্রতি কার্যদিবসে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার বাংলাদেশিকে চিকিৎসা ভিসা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে প্রত্যেক কার্যদিবসে ভিসা দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১ হাজার বাংলাদেশি নাগরিককে। অর্থাৎ চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান এক পঞ্চমাংশেরও বেশি হ্রাস করেছে ভারত।

ফলে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীরা মহা বিপদে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেকে চিকিৎসার জন্য ঝুঁকছেন থাইল্যান্ড-চীনের দিকে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা নিতে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইউনানে গিয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গিয়েছেনও।

বাংলাদেশের এক কূটনীতিক এ তথ্যে সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, “যখন কোথাও শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অন্যকিছু দিয়ে তা পূরণ হয়। মানুষ প্রতিনিয়ত বিকল্প খোঁজে।”

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একই তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন মুখাপাত্র জানিয়েছেন, অতি সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে লোকজন আসছেন এবং চীন এই ব্যাপারটিকে দুই দেশের পারস্করিক ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির একটি চিত্র হিসেবে দেখতে আগ্রহী। “বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। সে সবেরই একটি অংশ এই চিকিৎসা। ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয় যে আমরা তৃতীয় কোনো দেশকে চাপে রাখতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করছি; এমন কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আমাদের নেই; বরং এ ব্যাপারটিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যটনের একটি নতুন খাত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন দু’টি বাস্তব কারণে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ভিসা প্রদান কমিয়ে দিয়েছে দেশটি। প্রথমটি হলো বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসে লোকবলের অভাব। ওই কর্মকর্তা জানান, আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তা নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতে ফিরে এসেছেন। তাদের শূন্যস্থান এখনও পূরণ হয়নি।

আর দ্বিতীয় কারণ হলো, অনেক বাংলাদেশিই ভারতে প্রবেশের জন্য চিকিৎসা ভিসার অপব্যবহার করছেন। এই অপব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সংশ্লিষ্ট এবং এদের সবার বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

“বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ধীরে ধীরে ভিসা প্রদানের ব্যাপারটি স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি,” বলেছেন ওই কর্মকর্তা।

বাখ//আর