০৪:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম” প্রকল্পটি রাজস্বকরণ করনের দাবিতে গাজীপুরে মানববন্ধন

গাজীপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক “মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৭ম পর্যায়) শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের জনবলকে রাজস্বকরণ ও আউটসোর্সিং এর আওতাধীন না করে দ্রুত প্রস্তাবিত ৮ম পর্যায়ে প্রকল্প অনুমোদন প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে (২৩ মার্চ) রবিবার দুপুরে মানববন্ধন করেন মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটির শিক্ষক কেয়ারটেকারগণ।
মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ৭ম পর্যায় (৩১ ডিসেম্বর ২০২৪) পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতা ও সুনামের সাথে সারা দেশব্যাপী ৭৩৭৬৮টি শিক্ষা কেন্দ্র ও ২,০৫০টি রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েও বর্তমানে এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মাধ্যমে বৈষম্যের স্বীকার হওয়া চাকরিজীবী ও আমজনতার উপর জগদ্বল পাথরের মতো চেপে বসা বৈষম্যের অবসান হতে শুরু হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ প্রকল্পটি জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সাড়া দেশের মসজিদ অবকাঠামো ব্যবহার করে দারিদ্র্য, সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদেরকে বিনামূল্যে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, কিশোর কিশোরী ও বয়স্কদের পবিত্র কুরআন শিক্ষা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দান করে আসছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, আলেম ওলামা ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার নারী ও পুরুষের দারিদ্র্যতা দূরীকরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি মানবিক ও নৈতিকতার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক তৈরি করা, সরকারের উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে জনগণকে ধারণা প্রদান ও উন্নয়নকর্মসূচীতে সম্পৃক্তকরণে এ প্রকল্পটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষার একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রকল্পে নিয়োজিত জনবল অত্যন্ত দক্ষতা, আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধ, যৌতুক ও বাল্য বিবাহ রোধ, ইভটিজিং, যৌন নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার, মাদক ও চোরাচালান রোধসহ জনসাধারণের ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে ইমামদের মাধ্যমে মসজিদে জুমার খুৎবায় আলোচনা, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে আলেম-ওলামাদের অংশগ্রহণ, কোভিট-১৯ কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যাক্তিদের জানাযা, কাফন দাফন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে আসছে।
প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৩ জুন ২০১৮ তারিখে জারীকৃত পত্রের মাধ্যমে ভূতাপেক্ষভাবে ১ জুলাই ২০০০ থেকে রাজস্বখাতের আওতাভূক্ত হয়েছে। প্রকল্পের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ের জনবল দীর্ঘদিন কাজ করার পরও তাদেরকে রাজস্বখাতের আওতাভুক্ত করা হয়নি। চাকরী জীবনে ১৯৯৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পরবর্তীতে নিয়োগ প্রাপ্ত কোন জনবলের পদন্নতি হয়নি।
প্রকল্পের ৭টি পর্যায় সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হওয়ার পরও প্রকল্পের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতভূক্ত করা হয়নি। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি দীর্ঘ ৩২ বছর যাবত চলমান থাকলেও প্রকল্পে কর্মরত জনবলের মূল বেতন বছর বছর কখনো বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকারের প্রতিটি দপ্তরের কর্মচারীদের মত সমহারে কাজ করেও কেবলমাত্র প্রকল্পে কর্মরত থাকার কারণে বেতন বৈষম্যের স্বীকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল অন্যত্র চাকুরীর বয়স হারিয়ে প্রকল্প শেষে চাকুরী হারানোর ভয়ে চরম হতাশায় জীবন যাপন করছে। এছাড়া প্রকল্প কর্মরত জনবলের স্বাভাবিকভাবে ইনক্রিমেন্ট, টাইম স্কেল, পদোন্নতি না থাকায় সামাজিক মর্যাদা হানিসহ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অর্থ কষ্টে রয়েছে। প্রকল্পের বঞ্চিত ও হতাশাগ্রস্থ অবশিষ্ট জনবলকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত করা হলে তারা মাঠ পর্যায়ে সরকারের সকল পলিসি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমানে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৮ম) পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন হলেও দীর্ঘ ৩২ বছরের এই শিক্ষামূলক প্রকল্পটিকে আউটসোসিং করার চিন্তা ভাবনা চলছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ৯% হিন্দুদের মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি আউটসোর্সিং করা হয়নি অথচ ৯০% মুসলমানের দেশে কুরআন শিক্ষা প্রকল্পকে আউটসোর্সিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে কুরআন শিক্ষার প্রকল্পটি ধ্বংস করা হবে যা আলেম ওলামাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। তাই জনবলকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর, কর্মী-কেয়ারটেকারদের স্কেলভিত্তিক বেতন প্রদান ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ আউটসোর্সিং ব্যতিরেকে প্রকল্পটি ঈদের পূর্বেই অনুমোদন পূর্বক বকেয়াসহ বেতন-বোনাস প্রদানের দাবী জানান, মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাব স্মারক লিপি প্রদান করেন সংগঠন টির প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃবৃন্দ।
বাখ//আর