শামুক-ঝিঁনুকেই জীবিকা নির্বাহ

একদল নারী পুরুষ নদীর পানিতে নেমে কেউ ডুব দিচ্ছেন, কেউবা মাথা উচু করে পানিতে দুহাত দিয়ে কি যেন খুঁজছেন। মাঝে মধ্যে উপরে উঠে রোদে গাঁ শুকিয়ে আবারও পানিতে নামছেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালের শেষে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে ছোট যমুনা নদীর পাশ দিয়ে যেতে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানা যায়, নদীতে ঝিনুক খুঁজছেন তারা।
এখন নদীর পানি কমে গেছে অল্প পানিতে প্রচুর ঝিঁনুক পাওয়া যাচ্ছে। তা কুঁড়িয়েই ভালো আয় হচ্ছে তাদের। তারা সকলে উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের (সুর্যপাড়া) আদীবাসি গ্রামের বাসিন্দা।
এসময় কথা হয় এডওয়ার্ড কিসকু নামে (আদীবাসী সাঁওতাল) বৃদ্ধের সাথে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝিনুক গুলো কুঁড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বাড়ীর পাশে শ্যাতশ্যাতে জায়গায় রেখে দেই, এতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাজা রাখা যায়। এরপর ঝিঁনুক ভেঙে ভিতরের নরম অংশ টুকু রান্না করে খাই। খোলস গুলো ১০টাকা কেজি এবং ৪০ টাকা ডালি হিসেবে বিক্রি করি।
এতে খাবারের চাহিদা পুরন হচ্ছে এবং বেশ আয়ও হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ৭০/৮০ কেজি ঝিনুক পাই। তবে অনেক সময় ঝিনুকের খোলসে হাত-পা কেটে আহত হই। একাজে বসে নেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারীরাও। তারাও দরিদ্র সংসারে খাবারের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য নদী থেকে ঝিনুক তুলছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে প্রথমে লজ্জায় কথা বলতে চায়নি, পরে একে একে কথা হয়।
ক্রিসটিনা টুডু নামে এক নারী বলেন, এলাকার সকলে মিলে ঝিনুক কুঁড়াচ্ছেন। সেই ঝিনুক থেকে একদিকে খাবার এবং অন্যদিকে খোলস বিক্রি করেও ভালো আয় হচ্ছে তাদের। একই কথা বলেন মিলতি স্বরেণ, লিনা হেমরম ও শান্তি মুরমু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিরামপুর উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে শামুক ও ঝিনুক ক্রয় করে আসছেন। এসব শামুক-ঝিনুক কুঁড়িয়ে সেখানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক পরিবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, তারা ৩৫০ টাকা মণ কিনছেন। এটা দিয়ে চুন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদা বেগম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শামুক-ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এরা যেসব জলাশয়ে থাকে সেখান থেকে ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পানি দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এজন্য এদেরকে প্রকৃতির ফিল্টার বলা হয়। তিনি আরও বলেন, বণ্যপ্রাণী নিধন আইনে প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে শামুক-ঝিনুক আহরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবৈধভাবে এ ব্যবসা করলে কিংবা প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণ করলে আইন অনুযায়ী এর শাস্তির বিধান রয়েছে।
বাখ//আর