০৫:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

র-এর কর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন সংস্থার

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের সংখ্যালঘুরা ক্রমশ বাজে আচরণের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে আমেরিকায়। এজন্য ভারতের বৈদেশির গোয়েন্দা সংস্থার (যা আরএডব্লিউ বা ‘র’ নামে পরিচিত) কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ ও সুপারিশ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ভারত ছাড়াও ভিয়েতনামে ধর্মীয় বিষয়গুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘকাল ধরেই ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উপেক্ষা করছে আমেরিকা। কারণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে কাজে লাগাতে চায় ওয়াশিংটন। এসব কারণে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসার আশঙ্কা কম বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কারণে ২০২৩ সাল থেকে আমেরিকা ও কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আমেরিকায় খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর কর্মকর্তা বিকাশ যাদব যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে আমেরিকা। এ নিয়ে নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতে মামলাও চলছে। তবে ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সব সময় তাদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর আগে কানাডায় খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার সাথে র-এর কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ তোলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরপর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছায়।

মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতি অব্যাহত ছিল। একই সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও বৈষম্য বেড়েছে। কমিশন আরও বলেছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময়ে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছিল। এমনকি গত বছরের এপ্রিলে মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং তারা ‘অনেক বেশি সন্তান জন্ম দেয়’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে ভারত এসব অভিযোগকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করতে মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা প্যানেল। একই সঙ্গে বিকাশ যাদব ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্যানেল।

এসব ব্যাপারে মন্তব্য জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন মার্কিন সরকারের একটি দ্বিদলীয় উপদেষ্টা সংস্থা, যারা অন্য দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ এবং নীতিগত সুপারিশ করে থাকে।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০৮:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
৮২ জন দেখেছেন

র-এর কর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ মার্কিন সংস্থার

আপডেট : ০৮:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

ভারতের সংখ্যালঘুরা ক্রমশ বাজে আচরণের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে আমেরিকায়। এজন্য ভারতের বৈদেশির গোয়েন্দা সংস্থার (যা আরএডব্লিউ বা ‘র’ নামে পরিচিত) কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ ও সুপারিশ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ভারত ছাড়াও ভিয়েতনামে ধর্মীয় বিষয়গুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দীর্ঘকাল ধরেই ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উপেক্ষা করছে আমেরিকা। কারণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে কাজে লাগাতে চায় ওয়াশিংটন। এসব কারণে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসার আশঙ্কা কম বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কারণে ২০২৩ সাল থেকে আমেরিকা ও কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আমেরিকায় খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর কর্মকর্তা বিকাশ যাদব যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে আমেরিকা। এ নিয়ে নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতে মামলাও চলছে। তবে ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সব সময় তাদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর আগে কানাডায় খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার সাথে র-এর কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ তোলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরপর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছায়।

মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতি অব্যাহত ছিল। একই সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও বৈষম্য বেড়েছে। কমিশন আরও বলেছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময়ে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছিল। এমনকি গত বছরের এপ্রিলে মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ এবং তারা ‘অনেক বেশি সন্তান জন্ম দেয়’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে ভারত এসব অভিযোগকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করতে মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা প্যানেল। একই সঙ্গে বিকাশ যাদব ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্যানেল।

এসব ব্যাপারে মন্তব্য জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন মার্কিন সরকারের একটি দ্বিদলীয় উপদেষ্টা সংস্থা, যারা অন্য দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ এবং নীতিগত সুপারিশ করে থাকে।