০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে খুলতে পারে তিস্তা জট

অনলাইন ডেস্ক

তিস্তা নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসন রোধের একমাত্র উপায় চীনের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্দশার দিন শেষ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা- খুলে যেতে পারে ২৫ বছরের তিস্তা জট। যা হবে একটি ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয়।

তিস্তা পাড়ের দুঃখকথা, কোটি কোটি মানুষের দুর্দশার জীবন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আগ্রাসনে নদীতে বিলীন তিন কোটি পরিবার। উন্নয়ন বঞ্চিত আট জেলার মানুষ। খরাকালে আদায় করা যায় না পানির ন্যায্য হিস্যা। আর আগাম বন্যায় পানি ছেড়ে দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম। বিলীন হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঘিরে তিস্তা পাড়ে নতুন সম্ভাবনা হাতছানি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকট সমাধানের একমাত্র পথ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ১১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা যে দুর্দশায় আছি সেখান থেকে কে করলো, এটা আমার ব্যাপার না। আমরা তো বলছি কেউ না করলে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করবো। সেখানে এটা হলেই আমরা মনে করি এটা বিরাট বিজয়। যেহেতু এটা চাপাচাপির মধ্যে আছে। সেখানে যদি এটা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে তবে সেটা অবশ্যই কূটনৈতিক বিজয়।’

এক যুগ আগে তিস্তার ন্যায্য পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল ভারতের সাথে। ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরে সেই চুক্তি সাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বোল পালটে ফেলে ভারত। চুক্তির আশ্বাসে আশ্বাসে ১৩ বছর ঝুলিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। এই অবস্থায় এগিয়ে আসে পূর্বের অদূরবর্তী বন্ধু রাষ্ট্র চীন। তিস্তার মহাপরিকল্পনার এক ঐতিহাসিক প্রস্তাব দেয়া হয় ২০২২ সালে। কিন্তু ভারতের কূটনৈতিক বাধায় সেটি আর বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলে, তা বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় কুটনৈতিক বিজয়।

রিজিওনাল রাইটস এন্ড জাস্টিসের ফেলো অধ্যাপক ইলিয়াস প্রামাণিক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, আমাদের তিস্তা নদীর যে মহাপরিকল্পনা এবং তিস্তা নদীর পানি নিয়ে আমাদের সঙ্গে অনেক বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সঙ্গে। সেখানে উত্তরাঞ্চলের মানুষ এটার অনেকটাই ভুক্তভোগী। আমরা চাই এই বৈষম্যটা দূর হোক। আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীনভাবে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে চীনে আসলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বোয়াও সম্মেলনে যোগ দেয়া ছাড়াও বেইজিংয়ে গয়ে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে। আর প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে চীনের পাঠানো বিশেষ বিমানে। তার এই সফরকে ঘিরে নতুন করে আশায় বুক বাধছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।

রিজিওনাল রাইটস এন্ড জাস্টিসের ফেলো অধ্যাপক ইলিয়াস প্রামাণিক বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা আসলে উত্তর জনপদের মানুষের অনেক দিনের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু বরাবরই আমরা দেখেছি যে এই বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে। আসলে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনার মূল ইস্যুটি হলো পানি। তিস্তায় যদি আমার প্রাণ না থাকে, তাহলে আমার মহাপরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। আমরা আশা করছি আমাদের প্রতিবেশি যে রাষ্ট্র রয়েছেন, আমাদের পানির হিস্যাটুকু আমাদের বুঝিয়ে দিবেন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা কোনো বায়বীয় আকাঙ্ক্ষা নয়, এটি গণমানুষের দাবি।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিয়ার রহমান বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনাটা গণদাবিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি আপনা-আপনি হয়নি। মানুষের যে দুর্দশা, মানুষের যে অবস্থা, সেখান থেকে কিন্তু মানুষ এটা চাচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ারের সাথে একসাথেই এই সমীক্ষাটা হয়েছে। এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে এটি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।’

চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বলা আছে, বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে ভারত পানি ছেড়ে দিলেও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। উদ্ধার হবে কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি। গড়ে উঠবে বনায়ন। এছাড়া রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র, ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলও উল্লেখ করা আছে চীনের তিস্তা মহাপরিকল্পনায়। এতে প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাল্টে যাবে তিস্তা পাড়ের মানুষজনের জীবনমান।

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:২৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
৯০ জন দেখেছেন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে খুলতে পারে তিস্তা জট

আপডেট : ০১:২৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

তিস্তা নিয়ে ভারতীয় আগ্রাসন রোধের একমাত্র উপায় চীনের প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্দশার দিন শেষ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা- খুলে যেতে পারে ২৫ বছরের তিস্তা জট। যা হবে একটি ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয়।

তিস্তা পাড়ের দুঃখকথা, কোটি কোটি মানুষের দুর্দশার জীবন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আগ্রাসনে নদীতে বিলীন তিন কোটি পরিবার। উন্নয়ন বঞ্চিত আট জেলার মানুষ। খরাকালে আদায় করা যায় না পানির ন্যায্য হিস্যা। আর আগাম বন্যায় পানি ছেড়ে দিয়ে ডুবিয়ে দেয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম। বিলীন হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঘিরে তিস্তা পাড়ে নতুন সম্ভাবনা হাতছানি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকট সমাধানের একমাত্র পথ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ১১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা যে দুর্দশায় আছি সেখান থেকে কে করলো, এটা আমার ব্যাপার না। আমরা তো বলছি কেউ না করলে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করবো। সেখানে এটা হলেই আমরা মনে করি এটা বিরাট বিজয়। যেহেতু এটা চাপাচাপির মধ্যে আছে। সেখানে যদি এটা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে তবে সেটা অবশ্যই কূটনৈতিক বিজয়।’

এক যুগ আগে তিস্তার ন্যায্য পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল ভারতের সাথে। ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরে সেই চুক্তি সাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে বোল পালটে ফেলে ভারত। চুক্তির আশ্বাসে আশ্বাসে ১৩ বছর ঝুলিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। এই অবস্থায় এগিয়ে আসে পূর্বের অদূরবর্তী বন্ধু রাষ্ট্র চীন। তিস্তার মহাপরিকল্পনার এক ঐতিহাসিক প্রস্তাব দেয়া হয় ২০২২ সালে। কিন্তু ভারতের কূটনৈতিক বাধায় সেটি আর বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলে, তা বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্মরণীয় কুটনৈতিক বিজয়।

রিজিওনাল রাইটস এন্ড জাস্টিসের ফেলো অধ্যাপক ইলিয়াস প্রামাণিক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, আমাদের তিস্তা নদীর যে মহাপরিকল্পনা এবং তিস্তা নদীর পানি নিয়ে আমাদের সঙ্গে অনেক বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির সঙ্গে। সেখানে উত্তরাঞ্চলের মানুষ এটার অনেকটাই ভুক্তভোগী। আমরা চাই এই বৈষম্যটা দূর হোক। আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীনভাবে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে চীনে আসলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বোয়াও সম্মেলনে যোগ দেয়া ছাড়াও বেইজিংয়ে গয়ে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে। আর প্রধান উপদেষ্টাকে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে চীনের পাঠানো বিশেষ বিমানে। তার এই সফরকে ঘিরে নতুন করে আশায় বুক বাধছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।

রিজিওনাল রাইটস এন্ড জাস্টিসের ফেলো অধ্যাপক ইলিয়াস প্রামাণিক বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা আসলে উত্তর জনপদের মানুষের অনেক দিনের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু বরাবরই আমরা দেখেছি যে এই বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে। আসলে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনার মূল ইস্যুটি হলো পানি। তিস্তায় যদি আমার প্রাণ না থাকে, তাহলে আমার মহাপরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। আমরা আশা করছি আমাদের প্রতিবেশি যে রাষ্ট্র রয়েছেন, আমাদের পানির হিস্যাটুকু আমাদের বুঝিয়ে দিবেন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা কোনো বায়বীয় আকাঙ্ক্ষা নয়, এটি গণমানুষের দাবি।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিয়ার রহমান বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনাটা গণদাবিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি আপনা-আপনি হয়নি। মানুষের যে দুর্দশা, মানুষের যে অবস্থা, সেখান থেকে কিন্তু মানুষ এটা চাচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ারের সাথে একসাথেই এই সমীক্ষাটা হয়েছে। এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে এটি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।’

চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বলা আছে, বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে ভারত পানি ছেড়ে দিলেও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। উদ্ধার হবে কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি। গড়ে উঠবে বনায়ন। এছাড়া রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র, ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলও উল্লেখ করা আছে চীনের তিস্তা মহাপরিকল্পনায়। এতে প্রায় ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাল্টে যাবে তিস্তা পাড়ের মানুষজনের জীবনমান।