০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ একটি রাত: পবিত্র লাইলাতুল কদর : মাও. গোলাম মুরতোজা

মোঃ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশ তথা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মুসলমানরাও নিজেদের গুনাহ মাফ ও মনোবাসনা পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি এবং অধিক সাওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, কবর জিয়ারত আর বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এ রাত।

মসজিদে মসজিদের মোনাজাতে আল্লাহহুম্মা আমিন , আল্লাহহুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। মুসল্লিদের রোনাজারিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নামাজের ফাঁকে ফাঁকে মুসল্লিরা রাতে আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে বিভিন্ন কবরাস্থানে গিয়ে ফাতিহা পাঠ করে তাদের রূহের মাগফেরত কামনা করে মোনাজাত করেন।

পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিবাগত রাতে মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। মসজিদের ইমাম খতিব রাতে মুসলমানগণ নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাতে ফিলিস্তিনি মাজলুমদের মুক্তি, দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, কল্যাণ, সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া হয়।

মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটান মুসলমানগণ। আল্লাহর অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাতের আশায় মুসল্লিরা অসহায় গরিবদের মাঝে দান সদকা আদায় করেন।

সহীহ বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল কদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে।
হাদিসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না। অর্থাৎ কোন বছরে ২৫ তারিখে হল, আবার কোন বছরে ২১ তারিখে হল এভাবে। লাইলাতুল কদরের সওয়াব পেতে চাইলে ৫টি বিজোড় রাত্রেই তালাশ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (বুখারি, ২০২০) রমজানের শেষ জুমাকে জুমাতুল বিদা হিসেবে পালন করা দিনটি মুসলিম উম্মাহর কিছু মানুষের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে জেনে রাখা উচিত, জুমাতুল বিদা নামে কোনো পরিভাষা শরিয়তে নেই। এটি পরবর্তী সময়ে আবিষ্কৃত একটি বিষয়।

আর কোরআন ও হাদিস এবং সালফে সালেহিন, মুসলিম মনীষী ও ইসলামিক জ্ঞানবেত্তাদের প্রকৃষ্ট মতামত হলো- আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর নামাজ-রোজা ও অন্যান্য যেসব ইবাদত ফরজ করেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি। এছাড়াও রাসুল (সা.) যেসব সুন্নত ও নফলে অভ্যস্ত ছিলেন, সেগুলোর প্রতি আন্তরিক হওয়া ও নিজের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা কর্তব্য। কদরের রাতের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মাধ্যমে বোঝা যাবে কদরের রাত কোনটি। হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-কে শবে কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন যে তা’ রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রে অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে বা রমজানের শেষ রাতে হয়। যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সহিত, সওয়াব লাভের আশায় দাঁড়ায় তার অতিতের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

মাদারপুর কেন্দীয় জামে মসজিদের ইমাম মাও. গোলাম মুরতোজা তার বিস্তর আলোচনায় বলেন,মা নবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবীদের পাঠানো বা নবুওয়ত শেষ হয়েছে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। নবীদের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজের পক্ষ থেকে আসমানী কিতাবও দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন।

হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা বাকারা, (২), আয়াত, ১২৯)

আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলদের মাধ্যমে মানুষের হেদায়েতের জন্য অনেক আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। এর মধ্যে তাওরাত নাজিল হয়েছিল হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর। জাবুর অবতীর্ণ হয়েছে দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর। ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর। কোরআন নাজিল হয়েছে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। তাওরাত – হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে তার নাম তাওরাত। ‘তাওরাত’ কিতাবের নাম পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে।

বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে পথনির্দেশনা ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীরা তদনুসারে ইহুদিদের পরিচালনা করত এবং খোদাভীরু ও জ্ঞানীরাও। কারণ তাদের আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে তারা সাক্ষী ছিল।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত, ৪৪)

মুসা আলাইহিস সালামের ভাষা হিব্রু ছিল, তাই তার ওপর নাজিলকৃত কিতাব হিব্রু ভাষায় নাজিল করা হয় এবং তার নাম হিব্রু ভাষায় রাখা হয়। হিব্রু ভাষায় ‘তাওরাত’ শব্দটি শিক্ষা দেওয়া, দিকনির্দেশনা প্রদান বা নীতি প্রণয়ন করার অর্থে ব্যবহৃত হয়।

জাবুর – হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর জাবুর কিতাব নাজিল করা হয়েছে। জাবুরের অর্থ, লিপিবদ্ধ।

বনি ইসরাঈলের জন্য অবতীর্ণ এই কিতাবে দাউদ আলাইহিস সালামের বিভিন্ন তাসবিহাত বা আল্লাহর গুণাবলিমূলক কথার বর্ণনা এসেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে ওহি প্রেরণ করেছি, যেমন নুহ ও তার পরবর্তী নবীদের কাছে প্রেরণ করেছিলাম; ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধর; ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারুন ও সোলায়মানের কাছে ওহি প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে জাবুর দিয়েছিলাম।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত, ১৬৩)

জাবুর কিতাব কোন ভাষায় নাজিল হয়েছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ‘ইসলাম ওয়েবের’ তথ্যমতে, দাউদ (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের নবী।

আর কোরআনের ভাষ্যমতে, মহান আল্লাহ কোনো রাসুলকে তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাননি। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত, ৪)
বনি ইসরাঈলের মাতৃভাষা যেহেতু হিব্রু ছিল, তাই ‘জাবুর’ হিব্রু ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইনজিল – বনি ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ইনজিল অবতীর্ণ করেন আল্লাহ তায়ালা।

ইবনে কাসির রহ.-এর মতে, ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষা সুরিয়ানি ছিল। ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. ও ইবনে কাইয়িম রহ.-এর মতে তার ভাষা ছিল হিব্রু। সে হিসেবে ইনজিল সুরিয়ানি বা হিব্রু ভাষায় নাজিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মওদু ডটকম)

তবে ইনজিলের প্রাচীন যে কপি একসময় পাওয়া যেত, তা গ্রিক ভাষায় হওয়ায় অনেকের দাবি যে ইনজিল ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ছিল। ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত ইনজিল শব্দের অর্থ সুসংবাদ বা মুক্তির সুসংবাদ। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা বা ইয়াসু আলাইহহিস সালামের আগমনের সুসংবাদ।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাদের পর তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে ঈসা বিন মারিয়াম (আ.)-কে প্রেরণ করেছি। মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশরূপে তাঁকে ইনজিল প্রদান করেছি তাঁর পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে, যাতে ছিল উপদেশ ও আলো।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত,৪৬)

কোরআন – কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আরবি ভাষায় তা অবতীর্ণ হয়েছে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরবি ভাষী। তাই তার ওপর নাজিলকৃত কোরআনও আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে আরবি কোরআনরূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত, ২)

মাও. বজলুর রহমান আল মাদানী এ প্রসংগে বলেন, ৪ টি আমলে করলে নারীরা সহজেই জান্নাতে যাবেন। ইসলামে নারীদের সম্মান অনেক বেশি। সম্মানের মুকুট বলতে যা বোঝায়— ইসলাম নারীদের তাই পরিয়েছে। অথচ গোটা বিশ্বে একটা সময় নারীদের ভোগের পণ্য মনে করা হতো। এখনও অনৈসলামিক পরিবেশে নারীকে অসম্মানের পাত্র হিসেবে দেখা হয়— যার ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে।

নারীদের প্রতি নিগ্রহের অমানবিক সুযোগ পবিত্র কোরআন দূর করে দিয়েছে। কোরআনে নারীদের নামে ও তাদের অধিকার নিয়ে স্বতন্ত্র্য সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও কন্যাসন্তানের প্রতি অচ্ছুৎ-ভাব যাদের আছে, তাদের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। তাদের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তার কারণে তারা নিজ সম্প্রদায়ের লোক থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তারা ভাবে এই সন্তান রাখবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তাদের সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

নারীদের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো
ইসলাম নারীর জন্য আমল ও ইবাদত-বন্দেগি অনেক সহজ করেছে। ফলে নারীরা আল্লাহর হুকুম মান্য করা ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা খুবই সহজ। এখানে কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে যেকোনো মুসলিম নারী সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারে।
নারীরা যে চার কাজে জান্নাত লাভ করবে
ইসলাম নারীদের জন্য জান্নাত লাভের পথ একদম সহজ করে দিয়েছে। এক হাদিসে আছে, চারটি আমল করলে আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাতে পৌঁছে দেবেন। যেকোনো দরজা দিয়ে তারা জান্নাতে যেতে পারবে। হাদিসে আছে— এক. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। দুই. রমজানের সিয়াম। তিন. লজ্জাস্থানের হেফাজত। চার. স্বামীর আনুগত্য। এই চারটি আমলের বিনিময়ে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৬১)
ইসলাম নারীর জন্য আমল ও ইবাদত-বন্দেগি অনেক সহজ করেছে। ফলে নারীরা আল্লাহর হুকুম মান্য করা ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা খুবই সহজ। এখানে কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে যেকোনো মুসলিম নারী সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারে। যে গুণ থাকলে জান্নাতে যাবেনঃ

স্বামীকে ভালোবাসা ও মান্য করা
যেসব নারী স্বামীকে ভালোবাসে না ও স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়— আল্লাহ তাআলা ওই সব নারীদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই নারীর প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯০৮৭)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘(একবার) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো- কোন নারী উত্তম? তিনি বললেন, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে— সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। স্বামী আদেশ করলে, তার আনুগত্য করে, এবং (স্ত্রী) নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা স্বামী অপছন্দ করে, এমন কাজের মাধ্যমে স্বামীর বিরোধিতা করে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩১)

তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করা

নারী-পুরুষ সবার তাকওয়া অর্জন করা তে হবে। তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব। তাকওয়া না থাকলে, পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) তার প্রিয়তমা আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘হে আয়েশা, তোমার জন্য আবশ্যক হলো খোদাভীতি অর্জন করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯৭৮)

তিনি আরও বলেন, পবিত্র রমজানে শেষ দশকের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। নাজাতের এই দশকেই রয়েছে মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এটি কোরআনুল কারিম নাজিলের রাত। আবার শবে কদরের সম্মানে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও আছে পবিত্র কোরআনে। এ সুরায় বলা হয়েছে—‘লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (সুরা কদর: ১-৫)

এই মহান রাতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ-দোয়া ও জিকির-আজকারসহ প্রত্যেকটি নেক আমলের সীমাহীন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫)

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ২৭ রমজানের রাতটি শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হলেও শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে কদরের সম্ভাবনা রয়েছে। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি: ২০১৭)

 

সিএন্ডবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম, বিশিষ্ট আলোচক হাফেজ কারী ওবাইদুল্লাহ বলেন, পবিত্র কুরআনের ইতিহাস বলতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে নাযিলকৃত আয়াত গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করাকে বোঝানো হয়। এটি কয়েক যুগ যাবত ব্যাপ্ত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

মুসলমানদের বিশ্বাস ও ইসলামি গবেষকদের তথ্য মতে, কুরআন নাযিল ৬১০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়, যখন ফেরেশতা জিবরাইল (Arabic: جبريل, Jibrīl or جبرائيل, Jibrāʾīl) মক্কা নগরীর হেরা পর্বতে, সর্ব প্রথম কোরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নবী মুহাম্মাদ কে পাঠ করান। আর এই ধারাবাহিকতা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকালের মাধ্যমে শেষ হয়।

তৃতীয় খলিফা উসমান রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু(৬৪৪ থেকে ৬৫৬)। তিনি আমিরুল মু’মিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা হিসাবে তার খিলাফতের (ইসলামিক সরকারের) সময় হুুযায়ফা ইবনে ইয়েমেনি (রা:) এর পরামর্শে এ দায়িত্ব পালন করেন। যার জন্য তাকে আজও জামিউল কুরআন বা কুরআন সংকলনকারি বলা হয়। আর পুরো বিশ্বে তার সময়ে লিপিবদ্ধ করা কুরআন প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপক ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড পিটার্স এর ভাষ্যমতে, কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, পক্ষপাত এড়াতে অত্যন্ত রক্ষণশীলতা ও সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোরআনের কোন অংশ প্রথম নাজিল হয়েছে? তিনি বললেন- আল মুদ্দাছ্ছির। এছাড়া আবু মায়সারা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী আল কোরআনের সর্বপ্রথম নাজিল হওয়া সূরা হলো সূরা আল ফাতিহা। (দালাইলুল নুবুওয়াহ, খন্ড-২, পৃ: ১৫৭-১৫৮)

তিনি আরো বলেন, সূরা জুমারের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ অন্যত্র বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে’। (সূরা আল ফাতির : ২৮)
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শবে কদর চেনার উপায়: ৫টি উল্লেখযোগ্য হাদিস
শাহ্ সুলতান (রহঃ)কামিল মাদ্রাসা
সহকারী অধ্যাপক মোঃ দুরুল হোদা বলেন,
শবে কদর চেনার উপায়ঃ ৫ টি উল্লেখযোগ্য হাদিস-
মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। পবিত্র রমজানের শেষ দশকে রয়েছে এই রাত। এটি কোরআনুল কারিম নাজিলের রাত। এই রাতের সম্মানে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও আছে পবিত্র কোরআনে। এ সুরায় বলা হয়েছে—‘লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (দেখুন সুরা কদর: ১-৫)

এই মহান রাতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ-দোয়া ও জিকির-আজকারসহ প্রত্যেকটি নেক আমলের সীমাহীন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫)

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ২৭ রমজানের রাতটি শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হলেও শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে কদরের সম্ভাবনা রয়েছে। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি: ২০১৭)
এগুলো সবই সম্ভাবনার কথা। মূলত মহানবী (স.) নির্দিষ্ট করে শবে কদরের তারিখ উল্লেখ করেননি। অবশ্য শবে কদরের রাত চেনার বেশ কিছু আলামতের কথা তিনি বলেছেন। এরকম উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাদিস এখানে তুলে ধরা হলো-

হাদিস-১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, ‘ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। তবে উদয়ের সময় তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাৎ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)। (মুসলিম: ১৬৭০; ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১৬৫৫)

হাদিস-২ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনু খুজাইমাহ: ২১৯২)

হাদিস-৩ নবীজি (স.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনাহ) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতের চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমদ: ২২৭৬৫)

হাদিস-৪ এক হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৩/১৭৯; সহিহ আল-জামে: ৫৪৭২)

হাদিস-৫ নবী (স.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর রয়েছে সপ্তম, নবম অথবা বিংশ, যে রাতে (পৃথিবীর) নুড়ি পাথরের চেয়ে বেশি সংখ্যক ফেরেশতা জমিনে নেমে আসে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৩/১৭৮; সহিহ আল-জামে: ৫৪৭৩)

এছাড়াও বিভিন্ন বর্ণনায় শবে কদরের আরও কিছু আলামতের উল্লেখ রয়েছে, যেমন মৃদুবাতাস বইবে গোটা রাতজুড়ে, সে রাতের ইবাদতে মানুষ বেশি তৃপ্তি পাবে, ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণও হতে পারে ইত্যাদি। আবার ওই রাতটি সম্পর্কে কোনো বান্দাকে আল্লাহ ইলহাম করতে পারেন বা স্বপ্নে জানিয়েও দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শবে কদর নসিব করুন। রমজানের শেষ ১০ দিন বিশেষ করে বিজোড় রাতগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে সারা দেশের মত রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মসজিদগুলোতে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির আয়োজন করা হয়। পবিত্র এ রাতে অনেকেই কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। গতকাল মাগরিবের পরপরই মহিশালবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদ, মহিশালবাড়ী কেন্দীয় জামে মসজিদ, সিএন্ডবি জামে মসজিদ গোদাগাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ, মাদারপুর জামে মসজিদ, রেলওয়ে জামে মসজিদ, হাটপাড়া জামে মসজিদসহ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে মুসাল্লীগণ প্রার্থনা করেন।

বাখ//আর

শেয়ার করুন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট : ০১:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
১৭৪ জন দেখেছেন

হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ একটি রাত: পবিত্র লাইলাতুল কদর : মাও. গোলাম মুরতোজা

আপডেট : ০১:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশ তথা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মুসলমানরাও নিজেদের গুনাহ মাফ ও মনোবাসনা পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি এবং অধিক সাওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, কবর জিয়ারত আর বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এ রাত।

মসজিদে মসজিদের মোনাজাতে আল্লাহহুম্মা আমিন , আল্লাহহুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে। মুসল্লিদের রোনাজারিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নামাজের ফাঁকে ফাঁকে মুসল্লিরা রাতে আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতে বিভিন্ন কবরাস্থানে গিয়ে ফাতিহা পাঠ করে তাদের রূহের মাগফেরত কামনা করে মোনাজাত করেন।

পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিবাগত রাতে মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। মসজিদের ইমাম খতিব রাতে মুসলমানগণ নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাতে ফিলিস্তিনি মাজলুমদের মুক্তি, দেশ জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, কল্যাণ, সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া হয়।

মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটান মুসলমানগণ। আল্লাহর অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাতের আশায় মুসল্লিরা অসহায় গরিবদের মাঝে দান সদকা আদায় করেন।

সহীহ বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল কদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে।
হাদিসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না। অর্থাৎ কোন বছরে ২৫ তারিখে হল, আবার কোন বছরে ২১ তারিখে হল এভাবে। লাইলাতুল কদরের সওয়াব পেতে চাইলে ৫টি বিজোড় রাত্রেই তালাশ করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (বুখারি, ২০২০) রমজানের শেষ জুমাকে জুমাতুল বিদা হিসেবে পালন করা দিনটি মুসলিম উম্মাহর কিছু মানুষের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে জেনে রাখা উচিত, জুমাতুল বিদা নামে কোনো পরিভাষা শরিয়তে নেই। এটি পরবর্তী সময়ে আবিষ্কৃত একটি বিষয়।

আর কোরআন ও হাদিস এবং সালফে সালেহিন, মুসলিম মনীষী ও ইসলামিক জ্ঞানবেত্তাদের প্রকৃষ্ট মতামত হলো- আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর নামাজ-রোজা ও অন্যান্য যেসব ইবাদত ফরজ করেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি। এছাড়াও রাসুল (সা.) যেসব সুন্নত ও নফলে অভ্যস্ত ছিলেন, সেগুলোর প্রতি আন্তরিক হওয়া ও নিজের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা কর্তব্য। কদরের রাতের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মাধ্যমে বোঝা যাবে কদরের রাত কোনটি। হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-কে শবে কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন যে তা’ রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রে অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে বা রমজানের শেষ রাতে হয়। যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সহিত, সওয়াব লাভের আশায় দাঁড়ায় তার অতিতের যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

মাদারপুর কেন্দীয় জামে মসজিদের ইমাম মাও. গোলাম মুরতোজা তার বিস্তর আলোচনায় বলেন,মা নবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবীদের পাঠানো বা নবুওয়ত শেষ হয়েছে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। নবীদের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজের পক্ষ থেকে আসমানী কিতাবও দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন।

হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা বাকারা, (২), আয়াত, ১২৯)

আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুলদের মাধ্যমে মানুষের হেদায়েতের জন্য অনেক আসমানী কিতাব প্রেরণ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। এর মধ্যে তাওরাত নাজিল হয়েছিল হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর। জাবুর অবতীর্ণ হয়েছে দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর। ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর। কোরআন নাজিল হয়েছে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। তাওরাত – হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে তার নাম তাওরাত। ‘তাওরাত’ কিতাবের নাম পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে।

বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে পথনির্দেশনা ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীরা তদনুসারে ইহুদিদের পরিচালনা করত এবং খোদাভীরু ও জ্ঞানীরাও। কারণ তাদের আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে তারা সাক্ষী ছিল।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত, ৪৪)

মুসা আলাইহিস সালামের ভাষা হিব্রু ছিল, তাই তার ওপর নাজিলকৃত কিতাব হিব্রু ভাষায় নাজিল করা হয় এবং তার নাম হিব্রু ভাষায় রাখা হয়। হিব্রু ভাষায় ‘তাওরাত’ শব্দটি শিক্ষা দেওয়া, দিকনির্দেশনা প্রদান বা নীতি প্রণয়ন করার অর্থে ব্যবহৃত হয়।

জাবুর – হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর জাবুর কিতাব নাজিল করা হয়েছে। জাবুরের অর্থ, লিপিবদ্ধ।

বনি ইসরাঈলের জন্য অবতীর্ণ এই কিতাবে দাউদ আলাইহিস সালামের বিভিন্ন তাসবিহাত বা আল্লাহর গুণাবলিমূলক কথার বর্ণনা এসেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে ওহি প্রেরণ করেছি, যেমন নুহ ও তার পরবর্তী নবীদের কাছে প্রেরণ করেছিলাম; ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধর; ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারুন ও সোলায়মানের কাছে ওহি প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে জাবুর দিয়েছিলাম।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত, ১৬৩)

জাবুর কিতাব কোন ভাষায় নাজিল হয়েছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ‘ইসলাম ওয়েবের’ তথ্যমতে, দাউদ (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের নবী।

আর কোরআনের ভাষ্যমতে, মহান আল্লাহ কোনো রাসুলকে তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাননি। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত, ৪)
বনি ইসরাঈলের মাতৃভাষা যেহেতু হিব্রু ছিল, তাই ‘জাবুর’ হিব্রু ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইনজিল – বনি ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর ইনজিল অবতীর্ণ করেন আল্লাহ তায়ালা।

ইবনে কাসির রহ.-এর মতে, ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষা সুরিয়ানি ছিল। ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. ও ইবনে কাইয়িম রহ.-এর মতে তার ভাষা ছিল হিব্রু। সে হিসেবে ইনজিল সুরিয়ানি বা হিব্রু ভাষায় নাজিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মওদু ডটকম)

তবে ইনজিলের প্রাচীন যে কপি একসময় পাওয়া যেত, তা গ্রিক ভাষায় হওয়ায় অনেকের দাবি যে ইনজিল ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ছিল। ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত ইনজিল শব্দের অর্থ সুসংবাদ বা মুক্তির সুসংবাদ। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা বা ইয়াসু আলাইহহিস সালামের আগমনের সুসংবাদ।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি তাদের পর তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে ঈসা বিন মারিয়াম (আ.)-কে প্রেরণ করেছি। মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশরূপে তাঁকে ইনজিল প্রদান করেছি তাঁর পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে, যাতে ছিল উপদেশ ও আলো।’ (সূরা মায়িদা, আয়াত,৪৬)

কোরআন – কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আরবি ভাষায় তা অবতীর্ণ হয়েছে।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরবি ভাষী। তাই তার ওপর নাজিলকৃত কোরআনও আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে আরবি কোরআনরূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত, ২)

মাও. বজলুর রহমান আল মাদানী এ প্রসংগে বলেন, ৪ টি আমলে করলে নারীরা সহজেই জান্নাতে যাবেন। ইসলামে নারীদের সম্মান অনেক বেশি। সম্মানের মুকুট বলতে যা বোঝায়— ইসলাম নারীদের তাই পরিয়েছে। অথচ গোটা বিশ্বে একটা সময় নারীদের ভোগের পণ্য মনে করা হতো। এখনও অনৈসলামিক পরিবেশে নারীকে অসম্মানের পাত্র হিসেবে দেখা হয়— যার ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে।

নারীদের প্রতি নিগ্রহের অমানবিক সুযোগ পবিত্র কোরআন দূর করে দিয়েছে। কোরআনে নারীদের নামে ও তাদের অধিকার নিয়ে স্বতন্ত্র্য সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও কন্যাসন্তানের প্রতি অচ্ছুৎ-ভাব যাদের আছে, তাদের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। তাদের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তার কারণে তারা নিজ সম্প্রদায়ের লোক থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তারা ভাবে এই সন্তান রাখবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তাদের সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

নারীদের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো
ইসলাম নারীর জন্য আমল ও ইবাদত-বন্দেগি অনেক সহজ করেছে। ফলে নারীরা আল্লাহর হুকুম মান্য করা ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা খুবই সহজ। এখানে কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে যেকোনো মুসলিম নারী সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারে।
নারীরা যে চার কাজে জান্নাত লাভ করবে
ইসলাম নারীদের জন্য জান্নাত লাভের পথ একদম সহজ করে দিয়েছে। এক হাদিসে আছে, চারটি আমল করলে আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাতে পৌঁছে দেবেন। যেকোনো দরজা দিয়ে তারা জান্নাতে যেতে পারবে। হাদিসে আছে— এক. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। দুই. রমজানের সিয়াম। তিন. লজ্জাস্থানের হেফাজত। চার. স্বামীর আনুগত্য। এই চারটি আমলের বিনিময়ে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬৬১)
ইসলাম নারীর জন্য আমল ও ইবাদত-বন্দেগি অনেক সহজ করেছে। ফলে নারীরা আল্লাহর হুকুম মান্য করা ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা খুবই সহজ। এখানে কয়েকটি আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে যেকোনো মুসলিম নারী সহজেই জান্নাত লাভ করতে পারে। যে গুণ থাকলে জান্নাতে যাবেনঃ

স্বামীকে ভালোবাসা ও মান্য করা
যেসব নারী স্বামীকে ভালোবাসে না ও স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়— আল্লাহ তাআলা ওই সব নারীদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই নারীর প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯০৮৭)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘(একবার) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো- কোন নারী উত্তম? তিনি বললেন, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে— সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। স্বামী আদেশ করলে, তার আনুগত্য করে, এবং (স্ত্রী) নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা স্বামী অপছন্দ করে, এমন কাজের মাধ্যমে স্বামীর বিরোধিতা করে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩১)

তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করা

নারী-পুরুষ সবার তাকওয়া অর্জন করা তে হবে। তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব। তাকওয়া না থাকলে, পথভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) তার প্রিয়তমা আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘হে আয়েশা, তোমার জন্য আবশ্যক হলো খোদাভীতি অর্জন করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯৭৮)

তিনি আরও বলেন, পবিত্র রমজানে শেষ দশকের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। নাজাতের এই দশকেই রয়েছে মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। এটি কোরআনুল কারিম নাজিলের রাত। আবার শবে কদরের সম্মানে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও আছে পবিত্র কোরআনে। এ সুরায় বলা হয়েছে—‘লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (সুরা কদর: ১-৫)

এই মহান রাতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ-দোয়া ও জিকির-আজকারসহ প্রত্যেকটি নেক আমলের সীমাহীন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫)

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ২৭ রমজানের রাতটি শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হলেও শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে কদরের সম্ভাবনা রয়েছে। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি: ২০১৭)

 

সিএন্ডবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম, বিশিষ্ট আলোচক হাফেজ কারী ওবাইদুল্লাহ বলেন, পবিত্র কুরআনের ইতিহাস বলতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে নাযিলকৃত আয়াত গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করাকে বোঝানো হয়। এটি কয়েক যুগ যাবত ব্যাপ্ত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।

মুসলমানদের বিশ্বাস ও ইসলামি গবেষকদের তথ্য মতে, কুরআন নাযিল ৬১০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়, যখন ফেরেশতা জিবরাইল (Arabic: جبريل, Jibrīl or جبرائيل, Jibrāʾīl) মক্কা নগরীর হেরা পর্বতে, সর্ব প্রথম কোরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নবী মুহাম্মাদ কে পাঠ করান। আর এই ধারাবাহিকতা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকালের মাধ্যমে শেষ হয়।

তৃতীয় খলিফা উসমান রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু(৬৪৪ থেকে ৬৫৬)। তিনি আমিরুল মু’মিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা হিসাবে তার খিলাফতের (ইসলামিক সরকারের) সময় হুুযায়ফা ইবনে ইয়েমেনি (রা:) এর পরামর্শে এ দায়িত্ব পালন করেন। যার জন্য তাকে আজও জামিউল কুরআন বা কুরআন সংকলনকারি বলা হয়। আর পুরো বিশ্বে তার সময়ে লিপিবদ্ধ করা কুরআন প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপক ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড পিটার্স এর ভাষ্যমতে, কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, পক্ষপাত এড়াতে অত্যন্ত রক্ষণশীলতা ও সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোরআনের কোন অংশ প্রথম নাজিল হয়েছে? তিনি বললেন- আল মুদ্দাছ্ছির। এছাড়া আবু মায়সারা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী আল কোরআনের সর্বপ্রথম নাজিল হওয়া সূরা হলো সূরা আল ফাতিহা। (দালাইলুল নুবুওয়াহ, খন্ড-২, পৃ: ১৫৭-১৫৮)

তিনি আরো বলেন, সূরা জুমারের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘হে নবী! আপনি বলুন, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ অন্যত্র বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে’। (সূরা আল ফাতির : ২৮)
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শবে কদর চেনার উপায়: ৫টি উল্লেখযোগ্য হাদিস
শাহ্ সুলতান (রহঃ)কামিল মাদ্রাসা
সহকারী অধ্যাপক মোঃ দুরুল হোদা বলেন,
শবে কদর চেনার উপায়ঃ ৫ টি উল্লেখযোগ্য হাদিস-
মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাত লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। পবিত্র রমজানের শেষ দশকে রয়েছে এই রাত। এটি কোরআনুল কারিম নাজিলের রাত। এই রাতের সম্মানে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও আছে পবিত্র কোরআনে। এ সুরায় বলা হয়েছে—‘লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (দেখুন সুরা কদর: ১-৫)

এই মহান রাতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ-দোয়া ও জিকির-আজকারসহ প্রত্যেকটি নেক আমলের সীমাহীন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫)

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ২৭ রমজানের রাতটি শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হলেও শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে কদরের সম্ভাবনা রয়েছে। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি: ২০১৭)
এগুলো সবই সম্ভাবনার কথা। মূলত মহানবী (স.) নির্দিষ্ট করে শবে কদরের তারিখ উল্লেখ করেননি। অবশ্য শবে কদরের রাত চেনার বেশ কিছু আলামতের কথা তিনি বলেছেন। এরকম উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাদিস এখানে তুলে ধরা হলো-

হাদিস-১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, ‘ওই রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। তবে উদয়ের সময় তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাৎ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)। (মুসলিম: ১৬৭০; ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১৬৫৫)

হাদিস-২ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনু খুজাইমাহ: ২১৯২)

হাদিস-৩ নবীজি (স.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনাহ) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতের চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমদ: ২২৭৬৫)

হাদিস-৪ এক হাদিসে নবী (স.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৩/১৭৯; সহিহ আল-জামে: ৫৪৭২)

হাদিস-৫ নবী (স.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর রয়েছে সপ্তম, নবম অথবা বিংশ, যে রাতে (পৃথিবীর) নুড়ি পাথরের চেয়ে বেশি সংখ্যক ফেরেশতা জমিনে নেমে আসে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৩/১৭৮; সহিহ আল-জামে: ৫৪৭৩)

এছাড়াও বিভিন্ন বর্ণনায় শবে কদরের আরও কিছু আলামতের উল্লেখ রয়েছে, যেমন মৃদুবাতাস বইবে গোটা রাতজুড়ে, সে রাতের ইবাদতে মানুষ বেশি তৃপ্তি পাবে, ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণও হতে পারে ইত্যাদি। আবার ওই রাতটি সম্পর্কে কোনো বান্দাকে আল্লাহ ইলহাম করতে পারেন বা স্বপ্নে জানিয়েও দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শবে কদর নসিব করুন। রমজানের শেষ ১০ দিন বিশেষ করে বিজোড় রাতগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লাইলাতুল কদর উপলক্ষ্যে সারা দেশের মত রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মসজিদগুলোতে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির আয়োজন করা হয়। পবিত্র এ রাতে অনেকেই কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। গতকাল মাগরিবের পরপরই মহিশালবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদ, মহিশালবাড়ী কেন্দীয় জামে মসজিদ, সিএন্ডবি জামে মসজিদ গোদাগাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ, মাদারপুর জামে মসজিদ, রেলওয়ে জামে মসজিদ, হাটপাড়া জামে মসজিদসহ উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে মুসাল্লীগণ প্রার্থনা করেন।

বাখ//আর